বচসা: বাসে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কথা কাটাকাটি। মঙ্গলবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: শৌভিক দে
রাস্তার যান-যন্ত্রণায় রাস্তায় বসে পড়া ছাড়া গতি নেই! এক মাসের মধ্যে ফের অটোচালকদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে এ কথাই বলছেন বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
গত মাসে সল্টলেক-উল্টোডাঙা রুটের অটোচালকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া এবং তা দিতে না চাইলে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে পথ অবরোধ হয়েছিল। ওই ঘটনার পরে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অটোচালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে একগুচ্ছ পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। সেই পদক্ষেপের পরে এক মাসও কাটল না। ফের একই অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় বসলেন পুরুষ-মহিলা যাত্রীদের একটি বড় অংশ।
বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য এ দিন অটোর সংখ্যা ছিল এমনিতেই কম। বাসও আশানুরূপ ছিল না। অভিযোগ, যাঁরা অটো নিয়ে বেরিয়েছিলেন তাঁরা সল্টলেক যাওয়ার জন্য ১০০-২০০ টাকা ভাড়া হাঁকেন। সেই চড়া ভাড়া কেন্দ্র করেই গোলমালের শুরু। অটোচালকেরা যেতে না চাইলে যাত্রীদের কয়েক জন পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশের চাপে বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে যাত্রী তুললেও কিছু দূর গিয়েই তাঁদের জোর করে নামিয়ে দেন চালকেরা। তাতেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে।
অটো এবং বাস যথেষ্ট সংখ্যায় না থাকায় সকাল ১০টা নাগাদ ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে যাত্রীরা পথ অবরোধ শুরু করেন। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় চলা ওই অবরোধের
জেরে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে যানজট। পুলিশ সূত্রের খবর, এক সময়ে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে শান্ত করা গিয়েছিল। কিন্তু অন্য ট্রেনের যাত্রীরা বেরিয়ে যখন অবরোধের কারণ জানতে পেরেছেন, তাঁরাও বিক্ষোভকারীদের দলেই নাম লিখিয়েছেন! ফলে বেলা যত গড়িয়েছে, বিক্ষোভের বহরের পাশাপাশি যানজটে আটকে থাকা গাড়ির লাইনও দীর্ঘতর হয়েছে। বাসে বসে গলদঘর্ম হয়েছেন যাত্রীরা। তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের একপ্রস্ত বচসাও হয়। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে দিলে অবরোধ ওঠে।
পুলিশ জানিয়েছে, বেলা ১২টার কিছু আগে অবরোধ যখন ওঠে, তত ক্ষণে শোভাবাজারের দিকে গৌরীবাড়ি, ইএম বাইপাসে সল্টলেক চার নম্বর গেট এবং ভিআইপি রোডে শ্রীভূমি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে গাড়ির লাইন। যানজটে হাঁসফাঁস করতে থাকে সল্টলেকের ভিতরের রাস্তাও। পিএনবি থেকে হাঁটতে হাঁটতে উল্টোডাঙা পৌঁছে শোভাবাজারের গাড়ি ধরেন মঞ্জুশ্রী সাহা। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আগের বার বিক্ষোভ দেখানোর পরে নির্দিষ্ট ভাড়া-সহ অনেক প্রতিশ্রুতি তো দেওয়া হয়েছিল। সে সবের কী হল?’’ সেক্টর ফাইভে কর্মরত অনুশীলা বসু বলেন, ‘‘প্রতিদিন একই ঘটনা। অটোচালকেরা পুলিশের কথা শোনেন না। আমরা কিছু বললে দুর্ব্যবহার করবে। বাধ্য হয়ে রাস্তায় বসেছি।’’
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, সমস্যার সমাধানে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তার জন্য তো বাসকে আসতে দিতে হবে। যার প্রেক্ষিতে যাত্রীদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অটোচালকেরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছেন। সুষ্ঠু ভাবে অফিস যাওয়ার জন্যও রাস্তায় বসতে হয়।’’
৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোর জন্যই সমস্যা হয়েছে। এই সমস্যা বরাবরের নয়। তবে এটা ঠিক, অটোচালকদের একাংশ যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। সে জন্য যত দ্রুত সম্ভব মোটর ভেহিক্লসের আধিকারিকদের সঙ্গে বসে রুটগুলি নির্দিষ্ট করতে চাইছি। সমস্যার সমাধানে এটা খুব জরুরি।’’