ফের মেট্রোর দরজায় হাত, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

এ দিন দমদমমুখী একটি মেট্রো ছাড়ার মুহূর্তে কামরার দরজার ফাঁক দিয়ে হাতের তালু বেরিয়ে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি ট্রেন থামিয়ে দেন গার্ড।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০২:০৬
Share:

প্রাণপণ: ভিড় মেট্রোয় উঠতে ঠেলাঠেলি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, এসপ্লানেড স্টেশনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মেট্রোর দরজায় সজল কাঞ্জিলালের হাত কী ভাবে আটকে গিয়েছিল, তা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। এর মধ্যেই মঙ্গলবার সকালে নেতাজি ভবন স্টেশনে ফের ট্রেনের দরজায় এক যাত্রীর হাত আটকানোর অভিযোগকে ঘিরে উত্তাল হল মেট্রো।

Advertisement

দিনের শেষে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, কামরার দরজায় ‘ইচ্ছে করেই’ হাত রেখেছিলেন ওই যাত্রী।

এ দিন দমদমমুখী একটি মেট্রো ছাড়ার মুহূর্তে কামরার দরজার ফাঁক দিয়ে হাতের তালু বেরিয়ে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি ট্রেন থামিয়ে দেন গার্ড। ছুটে আসেন প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরাও। পরে দরজা খোলার আগেই কামরার ভিতরে হাত টেনে নেন ওই যাত্রী। কিছু ক্ষণের মধ্যে ট্রেনও ছেড়ে যায়। তবে ওই যাত্রীকে আটক করে জরিমানা করা হয়নি বলেই মেট্রো সূত্রের খবর।

Advertisement

কী ঘটেছিল এ দিন?

মেট্রো রেল সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৮টা ৪৭ মিনিট নাগাদ নেতাজি ভবন স্টেশনে দমদমমুখী একটি নন-এসি ট্রেনের গার্ড দেখতে পান, তাঁর কামরার দিক থেকে তিন নম্বর কামরার শেষ দরজা থেকে এক যাত্রীর হাত বেরিয়ে রয়েছে। ট্রেনটি তখন সবে চলতে শুরু করেছে। ওই দৃশ্য দেখতে পেয়েই আপৎকালীন ব্রেক কষে ট্রেন থামিয়ে দেন তিনি। কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরা ছুটে এসে ওই যাত্রীকে বকুনি দিলেও কামরার দরজা খুলে তাঁকে নামিয়ে আনার কোনও চেষ্টা করেননি। কিছু ক্ষণের মধ্যে ট্রেনটি নির্বিঘ্নে স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

এর পরেই ওই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ দিন সাব স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দেওয়ায় দুপুরের দিকে পার্ক স্ট্রিট এবং সেন্ট্রালের মধ্যে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। তার মধ্যে ওই ঘটনার খবর রটে যাওযায় যাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, মেট্রোর দরজার মাঝে কারও হাত রয়ে গেলে সেই দরজা বন্ধ হচ্ছে কী ভাবে? সজলবাবুর মতো দুর্ঘটনা কি বারবার ঘটতে থাকবে?

খবর ছড়িয়ে পড়তেই পার্ক স্ট্রিট কন্ট্রোল রুমে ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে পাঠান মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

কী ভাবে কোনও যাত্রীর হাত ভিতর থেকে আটকে পড়তে পারে, তা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। পরে প্ল্যাটফর্মের একাধিক ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন যে, পিছনের দিক থেকে তিন নম্বর কামরার শেষ দরজায় ওই ঘটনা ঘটেছে।

প্ল্যাটফর্মে থাকা দু’নম্বর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ট্রেনটি নেতাজি ভবন স্টেশনে থামলেও ওই দরজা দিয়ে কোনও যাত্রী ওঠা-নামা করেননি। কিন্তু তার পরেও ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে এক যাত্রীর হাত কামরার ভিতর থেকে আটকে পড়তে দেখা যায়। কিছু পরে ওই যাত্রী নিজেই তাঁর হাত ভিতরে টেনে নেন।

ঘটনার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করে মেট্রোকর্তাদের একাংশের মত, সজল কাঞ্জিলালের দুর্ঘটনা যে কামরায় ঘটেছিল, পিছনের দিক থেকে সেই একই কামরার প্রথম দরজায় এ দিনের ঘটনা ঘটেছে। তবে কি মেট্রোর

দরজায় হাত কী ভাবে আটকে যেতে পারে, তা হাতেকলমে পরীক্ষা করছিলেন ওই যাত্রী?

মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই কামরায় কেউ ওঠেননি। ইচ্ছাকৃত ভাবেই ওই যাত্রী দরজায় হাত দিয়েছিলেন। এটা অপরাধ।’’

অপরাধই যদি হয়, তা হলে ওই ব্যক্তিকে কামরা থেকে বার করে এনে জরিমানা বা প্রয়োজনীয় শাস্তি দেওয়া হল না কেন? প্রতিদিন ফলাও করে এত প্রচারের পরেও এক জন এই কাজ করে পার পেলেন কী করে? ইন্দ্রাণীর যুক্তি, ‘‘গোটা বিষয়টি এত দ্রুত হয়ে যায় যে, চেষ্টা করেও ওই ব্যক্তিকে ধরা যায়নি।’’

হাত নিয়ে বিতর্ক দিনের শেষে মিটলেও সারা দিন যাত্রীদের কাছে অবশ্য চরম ভোগান্তিরই আর এক নাম হয়ে থেকেছে মেট্রো। পার্ক স্ট্রিট থেকে সেন্ট্রালের মধ্যে সাব স্টেশনে গোলমালের জেরে বেলা ১২টা থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও ট্রেন সময়ে চলেনি। ওই সময়ে দুই স্টেশনের মাঝে মাত্র একটি করে ট্রেন রাখা যাচ্ছিল বলে খবর। সেই কারণেই বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে রাখতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন