আঙুল-কাণ্ডে ক্ষতিপূরণ কি আদৌ মিলবে

মেডিকো-লিগ্যাল বিশেষজ্ঞ উৎপল রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই সব ক্ষেত্রে রোগীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হারিয়ে ফেলার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের।’’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০২:২২
Share:

(বাঁদিকে) বৃহস্পতিবার হাসপাতালে নীলোৎপল চক্রবর্তী। (ডানদিকে) আঙুলের এই অংশই হারিয়ে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর অবস্থার অবনতি কিংবা হাসপাতালের ভুলে অঙ্গহানি অথবা নির্দিষ্ট কোনও অঙ্গের অংশ খোয়া যাওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত? সিএমআরআই হাসপাতালে আহতের হাতের আঙুলের অংশ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরে এই প্রশ্ন ফের সামনে এসেছে। রোগীদের স্বার্থে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন এবং মেডিকো-লিগ্যাল বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগী বা তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণ দাবি করতেই পারেন।

Advertisement

তাঁদের মতে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৩৮ ধারা অনুযায়ী মামলা হতে পারে। ওই ধারায় অনিয়ন্ত্রিত কাজকর্ম ও গাফিলতির জন্য কারও জীবন বিপন্ন হলে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। মেডিকো-লিগ্যাল বিশেষজ্ঞ উৎপল রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই সব ক্ষেত্রে রোগীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হারিয়ে ফেলার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের।’’ তিনি জানান, এর জন্য সরকারি হাসপাতাল থেকে তিনি কত শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেন, সেই শংসাপত্র নিতে হবে। এর পরে ‘স্টেট কনজিউমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল কমিশন’ বা ‘ন্যাশনাল কনজিউমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল কমিশন’-এ যেতে হবে।

সিএমআরআই-এ ভুক্তভোগী রোগী নীলোৎপল চক্রবর্তীর স্ত্রী চয়নিকা এ দিন বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিল মকুব করার কথা বলেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমরা নিইনি। আমাদের মেডিক্লেম আছে। বিলের সামান্য টাকা মকুব করাটা এত বড় গাফিলতির ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। যত দূর যেতে হয় যাব।’’

Advertisement

উৎপলবাবু বলেন, ‘‘ধরা হয়, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কেউ চাকরি করবেন। তাঁর যা বার্ষিক বেতন, তার থেকে এক তৃতীয়াংশ বাদ দিতে হবে। ওই এক তৃতীয়াংশ টাকা তাঁর বাৎসরিক খরচ। এর পরে ওই টাকার অঙ্কের সঙ্গে তাঁর যত বছরের চাকরি বাকি রয়েছে, সেই সংখ্যাকে গুণ করতে হবে। এর সঙ্গে কত শতাংশ হারে তাঁর বেতন বাড়তে পারে, তা-ও দেখতে হবে। এর পরে যে মোট অঙ্ক বেরোবে, তার থেকে তত শতাংশই তিনি পেতে পারেন, যত শতাংশ প্রতিবন্ধকতার তিনি শিকার হয়েছেন।’’

গত বুধবার পথ দুর্ঘটনায় আহত হন বেসরকারি এক রং সংস্থার কর্মী নীলোৎপল। তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য সিএমআরআই-এ ভর্তি করানো হয়। সে দিন হাসপাতালের তরফে অস্ত্রোপচার করতে চাওয়া হয়নি বলে রোগীর পরিবারের দাবি। পরের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাঁ হাতের অনামিকার কাটা অংশটি হারিয়ে গিয়েছে। ওই অংশ ছাড়াই কোনও মতে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে নীলোৎপলের পরিবার।

২০১৩-র জানুয়ারিতে বাইপাসের এক হাসপাতাল থেকে অর্ণব দত্ত নামে এক রোগীর মাথার খুলির অংশ হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলারও আইনজীবী উৎপলবাবু। ২০১৫ সালে অর্ণবের মৃত্যু হয়। অস্ত্রোপচারে দেরি করা ও খুলির অংশ হারিয়ে ফেলার জন্য প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। অর্ণবের মা রিনা দত্ত বললেন, ‘‘ছ’বছরেও ক্ষতিপূরণ পাইনি। হাসপাতাল ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল। নিইনি।’’

আর এক বেসরকারি হাসপাতালে ছেলের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের মামলা লড়ছেন রণজিৎ সরকার। তিনি বললেন, ‘‘এ দেশে মামলা লড়ে ক্ষতিপূরণ পেতেই চার-পাঁচ বছর কেটে যায়। কিন্তু বিদেশে এ রকম হয় না। হাত ভাঙার ঘটনায় দু’কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল ব্রিটেনে। ওখানে জীবনের দাম রয়েছে।’’ এমনই ক্ষতিপূরণের লড়াই লড়া প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা আবার বললেন, ‘‘বিদেশে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি কোনও কোনও ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের জরিমানা করা হয়।’’

সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ কী ভাবছেন? হাসপাতালের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল এ দিন। তাঁরা কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ইউনিট হেড ববি ভার্গিস কথা বলেননি। ‘অফিস অব পেশেন্ট এক্সপেরিয়েন্স’-এর প্রধান সুপ্রতীক দে সরকার বলেছেন, ‘‘যা বলার জনসংযোগ আধিকারিক বলবেন।’’ জনসংযোগ আধিকারিক পিয়াসী রায়চৌধুরী জানান, এখন এ ব্যাপারে তাঁদের কোনও বক্তব্যই নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন