মঞ্চেই কেঁদে ফেললেন পেম্বার দাদা

লাদাখের সাসের কাংরি ফোর শৃঙ্গ জয় করে ফেরার পথে হঠাৎই বরফের ফাটলে তলিয়ে গিয়েছিলেন পেম্বা। সে দিন ছিল ১৩ জুলাই। তার পরে আর পাওয়া যায়নি তাঁকে। সারা জীবন শুধু শেরপা বলে পরিচিতি পাওয়ায় দুঃখ ছিল আট বারের এভারেস্টজয়ী পেম্বার। তা ঘোচাতে রক ক্লাইম্বিং কোর্স শেষ করে মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগর (ম্যাক)-এর সদস্য হয়েছিলেন তিনি। শেরপা হিসেবে নয়, সাসের কাংরি ফোর ছিল অভিযাত্রী হিসেবে পেম্বার প্রথম অভিযান।

Advertisement

অভিরূপ দত্ত

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৫
Share:

স্মৃতি: পেম্বা শেরপার স্মরণসভায় তাঁর স্ত্রী ছোকপা শেরপা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ভাইয়ের কথা বলার জন্য মঞ্চে ডাকা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু মঞ্চে উঠে আর বলতে পারলেন না। কান্নায় গলা বুজে এল পেম্বা শেরপার দাদা পাসাং শেরপার। সোমবার কলকাতার মৌলালি যুব কেন্দ্রে পেম্বার স্মরণসভায় তখন আলপিন পড়লেও শোনা যাবে।

Advertisement

লাদাখের সাসের কাংরি ফোর শৃঙ্গ জয় করে ফেরার পথে হঠাৎই বরফের ফাটলে তলিয়ে গিয়েছিলেন পেম্বা। সে দিন ছিল ১৩ জুলাই। তার পরে আর পাওয়া যায়নি তাঁকে। সারা জীবন শুধু শেরপা বলে পরিচিতি পাওয়ায় দুঃখ ছিল আট বারের এভারেস্টজয়ী পেম্বার। তা ঘোচাতে রক ক্লাইম্বিং কোর্স শেষ করে মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগর (ম্যাক)-এর সদস্য হয়েছিলেন তিনি। শেরপা হিসেবে নয়, সাসের কাংরি ফোর ছিল অভিযাত্রী হিসেবে পেম্বার প্রথম অভিযান।

দুর্ঘটনার পরে খালি হাতে পেম্বার খোঁজে ক্রেভাসে কিছুটা নেমে গিয়েছিলেন পাসাং। কিন্তু অভিযোগ, উদ্ধারকাজে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে বিশেষ সাহায্য মেলেনি। এ নিয়ে কি ক্ষোভ রয়েছে? অনুষ্ঠানের পরে একান্ত আলাপচারিতায় পাসাং বলেন, ‘‘বিপদ তো থাকেই। আইটিবিপি দলের কাছে তো নির্দেশ ছিল না। তাই ওরা বেশি কিছু করতে পারেনি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পাহাড়ে বিপদ হলে উদ্ধারকারী দল পাঠাতে প্রচুর টাকা লাগে। তা ভারত-নেপালের অভিযাত্রীরা কোথায় পাবেন! অভিযানের খরচ তুলতেই তো হিমশিম খেতে হয়।’’

Advertisement

বাংলার পর্বতাভিযানে পেম্বার অবদানের কথা স্মরণ করতে ম্যাক-এর তরফ থেকে এ দিন একটি সভার আয়োজন করা হয়। সেখানেই এভারেস্টজয়ী দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, পেম্বার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে আর্থিক সাহায্যের জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে সাহায্যের আশ্বাসও মিলেছে। এ ছাড়াও পেম্বার পরিবারকে সাহায্যের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে খোলা আবেদন করা হয়েছিল। সাসের কাংরি অভিযানে পেম্বার সহ-অভিযাত্রী তথা বিশিষ্ট পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাতে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা জোগাড় হয়েছে। এ দিন মঞ্চে বলতে উঠে বারবার কেঁদে ফেলেন পেম্বার দীর্ঘ দিনের পরিচিত বসন্তবাবুও। দার্জিলিঙের ঘুমে পেম্বার বাড়িতে একটা ছোট সংগ্রহশালা গড়ে তোলার চেষ্টাও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পেম্বার স্ত্রী ছোকপা শেরপা এবং মেয়ে। ছিলেন রুদ্রপ্রসাদ হালদার, মলয় মুখোপাধ্যায়, সত্যরূপ সিদ্ধান্ত-সহ একাধিক বিশিষ্ট পর্বতারোহী এবং পর্বতপ্রেমী মানুষ। পেম্বার সঙ্গে বিভিন্ন অভিযানে কাটানো একাধিক মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন