চলচ্চিত্র উৎসব

নোটের গেরোয় সিনেমার টিকিট, চায়ের দোকানও

খুচরো টাকার অভাবে এই উৎসবের মুখে হাসি নেই। শনি, রবি ও সোম— টানা তিনটে ছুটির দিন পেরিয়েও নন্দন চত্বরের আশপাশের খাবারের দোকানগুলি বিষণ্ণ। দোকানিদের কথায়, ‘‘বিক্রি তো এ বার অনেক কম।

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

খুচরো টাকার অভাবে এই উৎসবের মুখে হাসি নেই। শনি, রবি ও সোম— টানা তিনটে ছুটির দিন পেরিয়েও নন্দন চত্বরের আশপাশের খাবারের দোকানগুলি বিষণ্ণ। দোকানিদের কথায়, ‘‘বিক্রি তো এ বার অনেক কম। লোকে পকেটের টাকা বার করতেই ভয় পাচ্ছে দাদা।’’ অন্য বার যদি ফেস্টিভ্যালে সপ্তাহান্তে তিনশো প্লেট পকোড়া, ফিশ ফ্রাই বিক্রি হয়, এ বার সেটি মেরেকেটে একশো। ‘‘মালও এ বার তাই বেশি আনিনি, হাতে হাতে গরম করে যেটুকু চালিয়ে দেওয়া যায়!’’ বলছেন দোকানিরা।

Advertisement

এমনিতে সরকারি উৎসবে ব্যবস্থাপনা, বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়ন, ছবি আনার খরচ, পুরস্কার— সবটাই মেটানো হয় চেকে, অডিটের হিসাবে। কিন্তু তার বাইরে চা-কফি-পকোড়া-ঝালমুড়ি ব্যবসার যে অসংগঠিত ক্ষেত্র, ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ায় ধাক্কাটা লেগেছে সেখানেই। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তাই এ বার কমেছে খাবারের দোকানও। পকোড়া, পিঠেপুলি, কেক-পেস্ট্রি, কফি— সব মিলিয়ে গোনাগুনতি ছ’টি দোকান। আর সর্বত্রই খরচ মেটাতে হবে নগদে।। একমাত্র কফিশপ ‘বারিস্তা’র আউটলেটটিতে পেটিএমের বন্দোবস্ত আছে। পাড়ার চেনা মাছওয়ালার ঢঙে ফেস্টিভ্যাল চত্বরের একটি দোকান শনিবারও পুরনো ৫০০ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু সোমবার তারাও হাত তুলে দিয়েছে, ‘‘না দাদা, আর পারব না।’’ চত্বরে পাঁচ জন ঘুরে ঘুরে কেটলিতে গরম চা-কফি বিক্রি করেন। তাঁদের অবস্থাও যে কে সেই।

নন্দন চত্বরের তা-ও একটা বাঁচোয়া আছে। সেখানে রোজকার টিকিট বিক্রি হয় না, সবই প্রেস আর ডেলিগেটস। শো শুরুর আধ ঘণ্টা আগে বিনামূল্যে ১৫০টি ডেলি পাস দেওয়া হচ্ছে। সিনেমাপ্রেমীরা অনেকেই তার জন্য শো শুরুর ঘণ্টা দেড়েক আগে থাকতে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। কিন্তু নবীনা, মিত্রা, সিটি সেন্টার বা আইনক্সের মতো যে সব বেসরকারি হলে ফেস্টিভ্যাল চলছে, তারা টিকিট বিক্রি করছে। খুচরোর অভাবে সেই বিক্রিও লাটে। নবীনা সিনেমার কর্ণধার নবীন চোখানির মতে, ‘‘ফেস্টিভ্যালের বিক্রি এ বার পুরো খারাপ। আগে যদি ১৫০ টিকিট বিক্রি হতো, এ বার তা মেরেকেটে কুড়ি-তিরিশটা।’’

Advertisement

তবে শুধু কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবই নয়, এ ক্ষেত্রে ছাড় পাবে না গোয়াও। কলকাতায় উৎসব শেষ হওয়ার পরে আগামী ২০ নভেম্বর থেকে গোয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে। সেই উৎসবের নিত্য খদ্দের, কলকাতার এক ফিল্ম বাফ জানালেন, ‘‘একটাই বাঁচোয়া। গোয়ার শ্যাকগুলিতে অন্তত পেটিএম চলবে।’’ গোয়ার পরে ৯ ডিসেম্বর থেকে আবার কেরলে ফিল্মোৎসব। আমজনতাকে যে ৫০ দিন কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে, ফেস্টিভ্যালগুলিও পড়েছে সেই সময়সূচিতেই।

কথা হচ্ছিল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে। আজ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নন্দনে দেখানো হবে টরন্টো ও বুসান ফেস্টিভ্যালে প্রশংসিত তাঁর নতুন ছবি ‘টোপ’। গোয়ায় ইফি এই ছবি বাতিল করে দিলেও কলকাতায় দেখানো হচ্ছে ‘স্পেশ্যাল ট্রিবিউট’ হিসেবে। ‘‘রবিবার দেড় ঘণ্টা ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম,’’ বলছেন তিনি।

কিন্তু পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের তো আরও একটি পরিচয় আছে। একদা অর্থনীতির অধ্যাপক। তাঁর কী মনে হচ্ছে ‘অর্থহীন’ এই সময় নিয়ে? ‘‘অসুবিধা হচ্ছে অবশ্যই। কিন্তু এখনও বলার সময় আসেনি। ব্ল্যাক মানি এখানে মেনস্ট্রিম অর্থনীতির প্রায় সমান্তরালে চলে। কিছু একটা করতেই হতো। সে দিক দিয়ে ঠিক আছে। কিন্তু আদতে কতটা কী হল, সেটা তো
সময় বলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন