এটিএমের পথে ইট পাতা। সোমবার হাওড়ায় ছবিটি তোলেন দীপঙ্কর মজুমদার।
এক কিলোমিটার পথ। সাত-সাতটি এটিএম। শুধু টাকারই দেখা নেই তাদের একটিতেও!
নোট বাতিলের ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে সাতাশ দিন। তবু ‘অর্থ-হীন’ দশা কাটছে না শহরের। মৌলালি মোড় থেকে সিআইটি রোডের পদ্মপুকুর পর্যন্ত মোট এক কিলোমিটার পথের দু’প্রান্তে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গোটা সাতেক এটিএম। তার মধ্যে ছ’টিতেই টাকা ছিল না সোমবারও।
আবার ধর্মতলা, লেনিন সরণি হয়ে থেকে মৌলালি যেতে যতগুলি এটিএম চোখে পড়েছে, সেগুলিতেও হয় শাটার নামানো কিংবা কাচের দরজার গায়ে ‘নো ক্যাশ’ নোটিস সাঁটা। দুপুরে সিআইটি রোডে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এটিএমে এসে টাকা পেলেন না বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুধীরলাল চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘এই নিয়ে সিআইটি রোডের তিন-তিনটে এটিএমে ঘুরলাম। কোথাওই টাকা নেই। বয়স হয়েছে। বেশি ঘোরাঘুরি সম্ভব নয়। খুব সমস্যা হচ্ছে।’’
শহরের সর্বত্র ছবিটা একই রকম। এটিএমে একটি কার্ড ঢুকিয়ে দিনে আড়াই হাজার টাকার বেশি তোলা যাচ্ছে না। অথচ তার মধ্যেও দিনের অধিকাংশ সময়ে বেশির ভাগ এটিএমেই নোট বেরোচ্ছে না। যদি বা বেরোয়, তা-ও ২০০০-এর নোট। যা ভাঙানোর কথা ভাবলেই আতঙ্কে ভুগছেন বেশির ভাগ লোকই।
এ দিন টাকা ছিল না ডালহৌসি, চাঁদনি চক ধর্মতলারও অধিকাংশ এটিএমেও। হাতে গোনা কয়েকটি এটিএমে টাকা থাকলেও তা কেবল দু’হাজার টাকার নোট।
এক দিকে শহরজুড়ে এটিএমের যখন এই হাল, অন্য দিকে তখন বহু ব্যাঙ্ক সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা দিতে পারেনি এ দিনও। এন্টালিতে ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কে প্রায় দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সরকারি কর্মী মহাদেব পাল। তুলতে পেরেছেন ১০ হাজার টাকা। ডানকুনির বাসিন্দা মহাদেববাবুর কথায়, ‘‘ভিড়ের কথা মাথায় রেখে গত চার দিন ব্যাঙ্কে আসিনি। কিন্তু আজ এসেই বা কী লাভ হল?’’
ইউকো ব্যাঙ্কের পার্ক সার্কাস শাখায় পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন পদ্মপুকুরের খুরশিদ আলমও। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েকে ৩০ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তি করাতে ৬০ হাজার টাকা লাগবে। কী হবে জানি না।’’
লালবাজার সূত্রে খবর, শহরের এটিএম এবং ব্যাঙ্কের বাইরে গ্রাহকদের লম্বা লাইন নিয়ে চিন্তিত কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। সোমবার টেলি-কনফারেন্সে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে ব্যাঙ্ক ও গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বলেছেন তিনি।