শুধু ভাইরাস নয়, তাকে ঘিরে অজস্র প্রতিকূলতা জয় করার কাহিনি
Coronavirus

‘হাল না-ছেড়ে ভেবেছি, এই যুদ্ধে জিততেই হবে’

হাসপাতালে শুয়ে তখন তাঁর মনে হচ্ছিল, বাড়ি ফিরতে পারব তো? ফিরলেও প্রিয়জনদের দেখতে পাব তো? বার বারই মনে হয়েছে, মা বাড়িতে একা আছেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২০ ০৩:৩৭
Share:

জয়ী: নিজের বাড়িতে তন্ময় ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি যখন কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, কলেজপড়ুয়া তন্ময় ঘোষ তখনই শুনেছিলেন যে, তাঁর বাবা, বোন ও ঠাকুরমাও আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদেরও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। বাড়িতে সুস্থ শুধু মা। তন্ময়ের শারীরিক অবস্থা তখন অবনতির দিকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে প্রবল। সঙ্গে পেটের গন্ডগোলও।

Advertisement

হাসপাতালে শুয়ে তখন তাঁর মনে হচ্ছিল, বাড়ি ফিরতে পারব তো? ফিরলেও প্রিয়জনদের দেখতে পাব তো? বার বারই মনে হয়েছে, মা বাড়িতে একা আছেন। তাঁর জন্যই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে হবে।

দিন চারেক আগে সুস্থ হয়ে দক্ষিণ দমদমের ঘোষপাড়ার বাড়িতে ফিরেছেন তন্ময়। এখন ১৫ দিন গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। তন্ময় বললেন, ‘‘হাসপাতালে যে দিন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, সে দিনও লড়ে গিয়েছি। হাল না-ছেড়ে ভেবেছি, এই যুদ্ধে জিততেই হবে। করোনাকে হারাতে হলে আতঙ্কিত হলে চলবে না। আর চিকিৎসকদের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।’’

Advertisement

মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তন্ময় কলেজের ‘কালচারাল সেক্রেটারি’ও। সারা দিনই এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতেন। তবে সুস্থ হওয়ার পরে ১৪ দিনের এই ‘বন্দিদশা’ হাসিমুখেই মেনে নিয়েছেন তিনি। বললেন, ‘‘সত্যি বলছি, আগে ততটা সচেতন ছিলাম না। বাইক নিয়ে এ দিক-ও দিক ঘুরে বেড়িয়েছি। আড্ডা দিয়েছি, বাজারেও গিয়েছি। কোনও সুরক্ষা ছাড়া ত্রাণ বিলির কাজও করেছি।’’

তন্ময়ের মতে, তিনি ঠেকে শিখেছেন। তাই এখন কেউ ফোন করলেই তাঁকে বলছেন সচেতন হতে। তন্ময়ের কথায়, ‘‘আমার বিশ্বাস, আমার থেকেই বাবা, বোন আর ঠাকুরমার করোনা হয়েছিল। কারণ, আমিই সব চেয়ে বেশি বাইরে বেরোতাম। আমি আর একটু সচেতন হলে পরিবারের কাউকেই ভুগতে হত না।’’

তন্ময় বললেন, ‘‘প্রথমে ১০১-১০২ জ্বর উঠছিল। প্যারাসিটামল খেতেই নেমে যাচ্ছিল। কিন্তু আবার আসছিল। সঙ্গে সর্দি-কাশি। খাবারের স্বাদ পাচ্ছিলাম না। এই লক্ষণগুলো যে করোনার, তা জানতাম। তাই দেরি না করে পরীক্ষা করাই। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসতেই সাগর দত্তে ভর্তি হয়ে যাই।’’

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। মাঝেমধ্যেই অক্সিজেন দিতে হয়েছে। তবে তন্ময় জানান, সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সদের ভাল ব্যবহার তাঁর এই লড়াই অনেক সহজ করে দেয়। তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে যাঁরা ভর্তি ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক প্রবীণের অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। কিন্তু তাঁকেও কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি। তাঁকে সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে দেখে বাকি রোগীদের মনেও বল আসে। আমাদের সকলের মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওই প্রবীণ মানুষটি।’’

তন্ময় জানান, সাগর দত্তের ওই ওয়ার্ডে তাঁর মতো আরও কয়েক জন যুবক ভর্তি ছিলেন। অনেকেরই শ্বাসকষ্ট ছিল। তাই অল্পবয়সিদের উদ্দেশ্যে তন্ময় বললেন, ‘‘যৌবনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তাই করোনা আমার কাছে ঘেঁষতে পারবে না, এমনটা ভাবার কারণ নেই। সাবধান হতেই হবে।’’

আরও পড়ুন: সংক্রমণ রুখতে বন্ধ থাকছে লোকনাথ উৎসব

তন্ময় জানান, তাঁদের বাড়ির পরিবেশ এখন কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত। ঠাকুরমা হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছেন। বাবা ও বোন হাসপাতালে থাকলেও সুস্থ হওয়ার পথে। তন্ময় বললেন, ‘‘প্রতিবেশীরাও খুব সাহায্য করেছেন। এক বাড়িতে চার জন আক্রান্ত শুনেও তাঁরা আতঙ্কিত হননি। সামাজিক দূরত্ব রেখে যতটা সম্ভব, সাহায্য করেছেন। আমি, ঠাকুরমা, বাবা, বোন— যখন হাসপাতালে ছিলাম, তখন মা বাড়িতে একা ছিলেন। ওই দুঃসময়ে ওঁরা মায়ের পাশে দাঁড়ান।’’

এখন সংক্রমণ আরও বেশি করে ছড়াচ্ছে। তাই সবাইকে খুব সাবধান হতে বলছেন তন্ময়। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা কিন্তু কাউকেই রেয়াত করে না। একটু বেপরোয়া হলে শুধু নিজের নয়, গোটা পরিবারেরও বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন