যানজটে অবরুদ্ধ পার্ক স্ট্রিট। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
এক বার দুপুরে, আবার বিকেলে। একই দিনে জোড়া মিছিলে অবরুদ্ধ হল মহানগর। নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। মিছিলের জেরে তৈরি হওয়া যানজটের রেশ কাটতে কাটতে রাত গড়িয়ে গিয়েছে। তার ফলে বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়েও রাত পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারেননি অনেকে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোয় চিটফান্ড সাফারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিছিল কলেজ স্ট্রিট থেকে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, এসএন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত গিয়ে থামে। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক হাজার লোকের মিছিলে শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলামুখী গাড়ির স্রোত আটকে পড়ে। গোটা এলাকাই যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সেই জট কাটার আগেই বিকেল ৪টে নাগাদ বাম কর্মী-সমর্থকেরা শহরের তিনটি আলাদা জায়গা থেকে মিছিল করে লালবাজারের দিকে যেতে শুরু করেন। ফের থমকে যায় পথ।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে মিছিল সামাল দেওয়ার পুলিশি বন্দোবস্ত নিয়ে। অনেকের মতেই, মিছিলগুলি হঠাৎ হয়নি। উদ্যোক্তারা আগেভাগেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে যানজট সামলানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি কেন?
এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ লালবাজারের উদ্দেশে বাম কর্মী-সমর্থকদের মিছিল হয়। একটির রুট ছিল কলেজ স্ট্রিট, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, লালবাজার। দ্বিতীয়টি রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ হয়ে লালবাজার। তৃতীয়টি ধর্মতলা ডোরিনা ক্রসিং থেকে শুরু হয়ে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট হয়ে লালবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর ফলে ওই এলাকায় যানজট তৈরি হয়। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে শিয়ালদহ, এজেসি বসু রোড, এপিসি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, জওহরলাল নেহরু রোডে। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, শহরের প্রধান রাস্তাগুলি আটকে যাওয়ায় কার্যত গোটা মহানগরই যানজটের কবলে পড়ে। অনেকেই তাই মেট্রোয় চেপে গন্তব্যে পৌঁছতে চেয়েছেন। তার ফলে সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে দমবন্ধ করা ভিড় হয়েছে মেট্রোয়।
পুলিশেরই একাংশ জানাচ্ছে, বামেদের লালবাজার অভিযানে পুলিশ লাঠি চালানোর পরেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। পুলিশের মারে কয়েক জন আহত হওয়ার ফলে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মোড়ে অবরোধ শুরু করেন বাম সমর্থকেরা। ফলে মিছিল শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার যে সুযোগ ছিল, তা-ও কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
তবে যানজট সামাল দিতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে লালবাজারের একাধিক সূত্র। তাঁরা জানাচ্ছেন, দুপুরে চিটফান্ড সাফারার্সের মিছিলে যানজট শুরু হতেই বেশ কিছু বিকল্প রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। তার উপরে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো বামেদের মিছিল শুরু হতেই পুলিশের যাবতীয় পরিকল্পনা ঘেঁটে গিয়েছিল। পুলিশের এক অফিসার বলছেন, ‘‘চিটফান্ড সাফারার্স এবং বামেদের মিছিলের জেরে শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা আটকে গিয়েছিল। তার ফলে গোটা শহরই ধীরে ধীরে যানজটের কবলে চলে যায়।’’