Fair

‘জীবনের চেয়ে মেলার আনন্দ জরুরি?’

নিউ টাউনে সম্প্রতি শেষ হয়েছে সরস মেলা। উদ্বোধনের দিন সে ভাবে লোক না হলেও দিন যত এগিয়েছে ততই ভিড় বেড়েছে ওই মেলায়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৭
Share:

প্রশ্নে এই জনসমাগম। শুক্রবার, কাঁকুড়গাছিতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

জমায়েত এড়াতে কেউ কেউ এ বার মেলার আয়োজন বন্ধ রেখেছেন। তবে অনেকেই সেই পথে হাঁটেননি। ভিড় হবে বুঝেও রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে মেলায় আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা। সরকারি বহু দফতরও করোনা পরিস্থিতিতে মেলার আয়োজন করছে দায়িত্বপালনের চিন্তা ভুলে। সব দেখে চিকিৎসকদের বড় অংশের প্রশ্ন, “মেলা ছাড়া কি চলে না? জীবনের অধিকার নিশ্চিত করার চেয়েও কি স্বেচ্ছাধীন আনন্দের অধিকার বেশি জরুরি?”

Advertisement

নিউ টাউনে সম্প্রতি শেষ হয়েছে সরস মেলা। উদ্বোধনের দিন সে ভাবে লোক না হলেও দিন যত এগিয়েছে ততই ভিড় বেড়েছে ওই মেলায়। দূরত্ব-বিধি তো ছিলই না, বহু ক্ষেত্রেই মানুষ মাস্কের ব্যবহারও ভুলেছিলেন বলে অভিযোগ। সল্টলেকের লাবণির বাসিন্দা, এক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য, “মেলার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে প্রবল ভিড় দেখেছি। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। সল্টলেক, নিউ টাউনের মতো জনবহুল জায়গায় এ ভাবে মেলা করার পরে সংক্রমণ বাড়লে উদ্যোক্তারা তার দায় নেবেন তো?” এই প্রশ্নেই কলকাতা বইমেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড। একই ভাবনা থেকে এ বার হচ্ছে না বিধাননগর মেলাও। গঙ্গাসাগর মেলা করা নিয়েও উদ্বেগে কলকাতা হাইকোর্ট। মেলার অনুমতি দিলেও কিছু নির্দেশিকা জারির কথা বলা হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ধর্মাচরণের অধিকার থেকেও বড় জীবনের অধিকার।

তবে এ নিয়ে ভাবতে রাজিই নয় রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতর। নিউ টাউনের থেকেও বেশি ঘনবসতিপূর্ণ কাঁকুড়গাছির রামকৃষ্ণ সমাধি রোডে চলছে ওই দফতরের সবলা মেলা। শুক্রবারও সেখানে যা ভিড় হয়েছিল, তা দেখে উদ্বেগ বাড়তে বাধ্য। যদিও ওই দফতরের এক আধিকারিকের মন্তব্য, “মানুষের মন ভাল রাখতে কিছু করা দরকার। তা ছাড়া মেলার সঙ্গে অনেকের রুটিরুজি জড়িয়ে থাকে।”

Advertisement

চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার যদিও বলছেন, “আয়ের দিকটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার জেরে একসঙ্গে বহু মানুষকে বিপদের মুখে ফেলা যায় না। ব্রিটেনের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। সেখানকার এক বন্ধু বলছিলেন, রাস্তায় তাঁবু টাঙিয়ে হাসপাতালের শয্যা পাততে হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় স্ট্রেন এত দ্রুত ছড়ায় যে কোনও ভাবেই ভিড় করতে দেওয়া যায় না।” চিকিৎসক কুণাল সরকারের মন্তব্য, “এই সব হঠকারিতা আর কত দিন চলবে? পরিস্থিতি নিজেরা না বুঝলে, যাঁরা বোঝেন অন্তত তাঁদের কথা শুনুন। রাজনৈতিক মিছিল বা মেলার ভিড় ছেড়ে হঠাৎ হাসপাতালে যেন ভিড় করতে না হয়, সেটা দেখুন। একটু দায়িত্ববান হোন। জীবনের চেয়ে মেলার আনন্দ জরুরি?”

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী যদিও বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলা বা অন্য মেলার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে। সব কিছু বন্ধ করা যায় না। তা হলে তো সবার আগে বাজার যাওয়া বন্ধ করতে হয়।” তিনি বলেন, “সব করুন। তবে মাস্ক পরে, স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে নিয়ে।” চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর পাল্টা মন্তব্য, “সরকার কি ঘোষণা করে দিয়েছে যে আমরা কোভিড-মুক্ত হয়ে গিয়েছি? সেটা হয়নি যখন, তখন সব রকমের ভিড় এড়িয়ে চলা এবং বন্ধ করা সকলের কর্তব্য। কিছু লোকের আনন্দ বা অন্য কোনও কারণে গরিষ্ঠ অংশকে বিপদে ফেলা আদতে অপরাধ।” মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘মনের খোরাক খুঁজতে গিয়ে ভিড়ে ঢোকাটা যে বিপজ্জনক, সেটা সকলেরই বোঝা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন