দু’পাড়ার গোলমালে বোতল-বৃষ্টি, বন্ধ রাস্তা

মুড়ি-মুড়কির মতো রাস্তার দু’ধার থেকে উড়ে আসছে কাচের বোতল। কোনওটা মদের, কোনওটা ঠান্ডা পানীয়ের। মঙ্গলবার সকালে দুই বস্তির প্রকাশ্যে গোলমালের জেরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার একাংশে বন্ধ রাখতে হল যান চলাচল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫১
Share:

সংঘর্ষ: এ ভাবেই রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ভাঙা বোতল। মঙ্গলবার, শরৎ বসু রোডে। —নিজস্ব চিত্র।

মুড়ি-মুড়কির মতো রাস্তার দু’ধার থেকে উড়ে আসছে কাচের বোতল। কোনওটা মদের, কোনওটা ঠান্ডা পানীয়ের। মঙ্গলবার সকালে দুই বস্তির প্রকাশ্যে গোলমালের জেরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার একাংশে বন্ধ রাখতে হল যান চলাচল। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনলেও দিনভর এলাকা উত্তপ্ত হয়ে রইল।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত কালীপ্রতিমা বিসর্জন নিয়ে। অভিযোগ, বিসর্জনের সময়ে দুই পাড়ার ছেলেদের মধ্যে গোলমাল হয়। সেটি তখনকার মতো মিটে গিয়েছিল। মঙ্গলবার তার রেশ ধরেই বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মতিলাল নেহরু রোডের চার নম্বর বস্তির কিছু ছেলে উল্টো দিকের মনোহরপুকুর রোডের সেবক সঙ্ঘ নামে একটি পুজোর প্রাঙ্গণে আসেন। সেখানেও তখন পুজো কমিটির লোকজন ভোগ খাওয়ানোর আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা দুই যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে ওই যুবকদের সঙ্গে সেবক সঙ্ঘের পুজো কমিটির লোকজনের প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরে চার নম্বর বস্তির ছেলেরা এলাকা ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই তাঁরা পাড়ার একাধিক ছেলে নিয়ে আসেন ও সেবক সঙ্ঘের ছেলেদের লক্ষ করে কাচের বোতল ছুড়তে শুরু করেন। অন্য দিক থেকে কাচের বোতল উড়ে আসতে দেখে সেবক সঙ্ঘের ছেলেরাও পাল্টা বোতল ছোড়া শুরু করেন।

কয়েক মুহূর্তেই শরৎ বসু রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার লোকজন যে দিকে পারেন ছুটে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের গেট।

Advertisement

শরৎ বসু রোডের উপরে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে কাচের টুকরো। খবর পেয়ে পৌঁছয় টালিগঞ্জ এবং লেক থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। খবর যায় লালবাজারে। সেখান থেকেও আসে ফোর্স, নামানো হয় র‌্যাফও। পৌঁছন দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের অফিসারেরা। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে দু’পাড়ার ছেলেদের ছত্রভঙ্গ করতে হয়। আটক করা হয় দুই পাড়ারই বেশ কয়েক জনকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শরৎ বসু রো়ডের ওই অংশে পড়ে থাকা বোতলের টুকরো ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করা হয়।

দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী তখনও সেবক সঙ্ঘ পুজোর কাছে বসে। পাড়ার যুবকদের দাবি, তাঁরা ঝামেলা শুরু করেননি। চার নম্বর বস্তির ছেলেরাই এসে গোলমাল করেছে। ভোগ খাওয়ানোর দিন প্রতি বছরই এই গোলমাল করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কী কারণে এই গোলমাল তা কেউ-ই বলতে রাজি হননি।

অন্য দিকে মতিলাল নেহরু রোডের চার নম্বর বস্তিতে গিয়ে দেখা গেল অধিকাংশ বাড়ির ছেলেরা নেই। বেশ কয়েক জনকে লেক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে সেখানকার বস্তিবাসীর পাল্টা অভিযোগ, তাঁদের ছেলেদের কোনও কারণ ছাড়াই পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়েছে। গোলমাল করেছে সেবক সঙ্ঘ পুজো কমিটির লোকজন।

ঘটনায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। তবে পুলিশের এক কর্তার কথায়, ঘটনার সূত্রপাত কী কারণে তার তদন্ত শুরু হয়েছে। যে হেতু সেবক সঙ্ঘের পুজো কমিটি এ দিন সাধারণ মানুষ ও পাড়ার লোকজনকে ভোগ খাওয়ান তাই ওই আয়োজন যাতে নির্বিঘ্নে শেষ হয়, সে জন্য পুলিশি প্রহরা রাখা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন