হাপিত্যেশ: দমদম স্টেশনের রোজকার ছবি এটাই। নিজস্ব চিত্র
দমদম স্টেশন। বেলা ১২টা। গরমে মেট্রোর টিকিট কাটার লাইন স্টেশন চত্বর ছাড়িয়ে বহু দূর চলে গিয়েছে। চড়া রোদে ঘামতে ঘামতে দমদম রোডের দিকে একটি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অনেকে। অন্য লাইনটি চলে গিয়েছে বেদিয়াপাড়ার দিকে। টিকিট কাটতে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ব্যস্ত সময়ে একের পর এক মেট্রো ছাড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। একই দৃশ্য দেখা গেল বিকেলেও।
কেন এমন অবস্থা? খোঁজ করে জানা গেল, দমদম স্টেশনে মেট্রোর ২২টি টিকিট কাউন্টার রয়েছে। কিন্তু খোলা রয়েছে মাত্র আটটি। কেন? মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রত্যুষ ঘোষের জবাব, ‘‘দমদমে রেল স্টেশনও রয়েছে। আপ ও ডাউনের একাধিক ট্রেন স্টেশনে ঢুকে গেলে হঠাৎ ভিড় বেড়ে যায়। এর জন্য আমরা ১১টি কাউন্টারও খুলে দিই।’’ প্রত্যুষবাবুর দাবি, ‘‘এক জন ইনস্পেক্টরও দমদমে রয়েছেন। যাঁর দায়িত্ব কোনও লাইনে ভিড় বেড়ে গেলে যাত্রীদের নতুন খোলা কাউন্টারটি দেখিয়ে দেওয়া।’’
মেট্রো রেল সূত্রে খবর, দমদম স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজার যাত্রী টোকেন নিয়ে ও ৩৫ হাজার যাত্রী স্মার্ট কার্ডে যাতায়াত করেন। স্টেশনের দু’পাশে মেট্রোর সাতটি এবং ছ’টি টিকিট কাউন্টার রয়েছে। মাঝে আরও ন’টি কাউন্টার রয়েছে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, মাঝের এই ন’টি কাউন্টার প্রায়ই বন্ধ থাকে। বাকিগুলির মধ্যেও খোলা থাকে অর্ধেক কাউন্টার।
এমনিতেই দমদমে মেট্রোর দিকে ঢোকার মুখের একচিলতে সরু রাস্তাটি দোকান আর হকারে দখল হয়ে রয়েছে। রাস্তার উপরেই অবাধে চলে আনাজ থেকে শুরু করে ফিনাইল, জুতো পালিশ, ফুল, ফল, চারাগাছ ও খাবারের বিকিকিনি। সেই সব দোকানের মধ্যে দিয়েই চলে যায় টিকিট কাটার দীর্ঘ লাইন। মেট্রো থেকে নামার পরে কিংবা দমদম রেল স্টেশনে ট্রেন ধরার জন্য যাত্রীদের যাতায়াতের উপায়ই নেই। তাঁদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, ঝগড়া লেগে যাচ্ছে হামেশাই।
বনগাঁর বাসিন্দা মৌলি রায় বললেন, ‘‘বনগাঁ থেকে ট্রেন ধরে দমদমে নেমেছি, রবীন্দ্র সদন যাব। প্রতিদিন যাতায়াত করি না বলে স্মার্ট কার্ড নেই। টিকিট কাটতে গিয়ে এত দেরি হবে ভাবতে পারিনি। যাচ্ছেতাই অবস্থা।’’ দমদমের কদমতলার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সাহাকে প্রতিদিনই অফিসের কাজে শ্যামবাজার যেতে হয়। এ দিন লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘স্মার্ট কার্ডে টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই এই রোদে আধ ঘণ্টারও বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে লোকের ধাক্কা আর গালিগালাজ খাচ্ছি।’’