প্রতীকী ছবি।
আচমকা চোখে অন্ধকার দেখে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছিলেন বছর আটত্রিশের এক যুবক। তড়িঘড়ি তাঁকে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁকে ভর্তি করা হয় কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে। প্রায় দু’দিন বাদে করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় অন্য ওয়ার্ডে। যুবকটির পরিজনেদের অভিযোগ, মাঝের ওই সময়ে তাঁর কার্যত কোনও চিকিৎসাই হয়নি।
শুধু ওই যুবকই নন। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের ক্ষেত্রে এই একই অভিযোগ তুলছেন বহু রোগীর বাড়ির লোকজন। তাঁদের প্রশ্ন, বেসরকারি পরীক্ষাগারে করোনা পরীক্ষা হলে যেখানে সে দিনই রাতের মধ্যে রিপোর্ট মিলছে, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলে কোভিডের রিপোর্ট আসতে এত সময় লাগবে কেন? রিপোর্ট আসা পর্যন্ত যথাযথ চিকিৎসা শুরু না হওয়ার কারণে রোগীর অবস্থার যদি অবনতি হয়, সেই দায় কে নেবে? পাশাপাশি, আরও একটি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের বক্তব্য, একে তো প্রকৃত চিকিৎসা শুরু হচ্ছে দেরিতে। উপরন্তু মাঝের ওই সময়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকার জন্য অহেতুক মোটা টাকা গুনতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, ন্যূনতম জরুরি পরিষেবাটুকু না দিয়ে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে তারা প্রথমেই যে কোনও রোগীকে কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখছে। রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নন-কোভিড বিভাগে।
শ্যামবাজারের বাসিন্দা ওই যুবকের কথায়, ‘‘মাথায় আঘাতের জন্য পর্যবেক্ষণ ও কেন বার বার চোখে অন্ধকার দেখছি, তা জানতে পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু টানা দেড় দিন কোনও পরীক্ষাই হয়নি। যা হল, সবই রিপোর্ট আসার পরে।’’ যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ এখনও পাইনি। তবে এখন তো দু’ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট চলে আসার সুবিধা রয়েছে। তাড়াতাড়ি যাতে রিপোর্ট আসে, তার জন্য রোগী বা পরিজনকেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে।’’
করোনা রিপোর্ট দেরিতে আসার অভিযোগ উঠছে বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও। সমস্যাটির বিষয়ে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাধারণত এক দিনের মধ্যেই রিপোর্ট আসার কথা। কোনও ক্ষেত্রে হয়তো সময় লাগছে। তবে মধ্যবর্তী ওই সময়ে রোগীর যে চিকিৎসা প্রয়োজন, তা করতেই হবে। একই সঙ্গে উপসর্গ শুনে যদি করোনা সন্দেহ হয়, তারও চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। এই নিয়ম সরকারি ও বেসরকারি— সর্বত্রই প্রযোজ্য।’’
আবার ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র প্রধান রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘যে সব বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার পরিকাঠামো আছে, সেখানে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট চলে আসে। এতে সুবিধাও হয়। কারণ, আইসোলেশন শয্যা দ্রুত খালি করা দরকার। তবে কিছু জায়গায় সেই পরিকাঠামো না থাকার জন্য সময় লাগছে। তাতে অসুবিধা হচ্ছে।’’ রূপকবাবু আরও জানান, যে সব বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠানো নেই, তাদের বাইরের পরীক্ষাগার থেকে করোনা পরীক্ষা করে আনতে অন্তত ১২-১৬ ঘণ্টা সময় লাগে।
আর সেই সময়-পর্বে পুরোমাত্রায় সংশ্লিষ্ট রোগীর চিকিৎসা চালানোর নিয়ম আছে বলে জানাচ্ছেন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে চিকিৎসককে পিপিই পরে চিকিৎসা করতে হবে। সব জায়গায় আরটি-পিসিআর করার উপায় নেই ঠিকই। তবে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে নেগেটিভ এলে আরও নিশ্চিত হতে সিবি-ন্যাট করা যেতে পারে।’’ আর এক চিকিৎসক সংগঠন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর সদ্য প্রাক্তন সভাপতি তথা ইএনটি চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পূর্ব পরিকল্পিত চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার আগেই করোনা পরীক্ষা করা যায়। তবে জরুরি ক্ষেত্রে ভর্তি হলে যত তাড়তাড়ি সম্ভব পরীক্ষার প্রয়োজন। কেন সময় বেশি লাগছে, সে দিকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকেও নজর দিতে হবে।’’