ডুবন্ত জেটি থেকে পাম্প করে বার করা হচ্ছে জল। বৃহস্পতিবার, ফেয়ারলি লঞ্চঘাটে।—নিজস্ব চিত্র।
বছরের পর বছর রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার অভিযোগ ছিলই। এ বার তা প্রমাণ হল অফিসের ব্যস্ত সময়ে পন্টুন বা জেটির তলায় ফুটো হয়ে গঙ্গায় ডুবে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায়।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এমনই ঘটনা ঘটল ফেয়ারলি লঞ্চঘাটে। বড় কোনও বিপদ না হলেও ওই ভিড়ের সময়ে ফেরিঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেওয়ায় নাজেহাল হলেন লঞ্চ পারাপার করতে আসা নিত্যযাত্রীরা। লঞ্চ না চলায় হাওড়ার দিকে কিছুক্ষণ বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। অবশ্য পাশের জেটিতে রাজ্য ভূতল পরিবহণের লঞ্চ মেলায় যাত্রীদের পারাপারের সমস্যা মিটে যায়।
ফেয়ারলি লঞ্চঘাট দিয়ে হাওড়া-ফেয়ারলি রুটের লঞ্চ চালায় দু’টি সংস্থা রাজ্য ভূতল পরিবহণ ও হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। ফেয়ারলি-সহ গঙ্গাতীরে মোট ১৮টি জেটিতে লঞ্চ চালায় ওই সমিতি। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হঠাত্ জেটির এক দিক ডুবতে শুরু করে। সেই সময়ে হাওড়া-ফেয়ারলি রুটের একটি লঞ্চ হাওড়ার দিকে যাত্রী তুলছিল। কিন্তু জেটি এক দিকে হেলে গিয়েছে খবর পেয়ে লঞ্চটি আর ছাড়েনি। এর পরেই কর্মীরা ঘটনাটি সংস্থার কর্তাদের জানান। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই রুটের লঞ্চ চলাচল।
সমবায় সমিতির পক্ষে শিশির দাস বলেন, “ঘটনার পরেই দু’টি পাম্প বসিয়ে জেটির ভিতর থেকে জল বার করার কাজ শুরু হয়। এর পরে জেটির ভিতরে ঢুকে ফুটো মেরামত করা হয়। বিকেলের মধ্যে ফের শুরু হয়ে যায় ওই রুটে লঞ্চ চলাচল।”
কিন্তু এ ধরনের ঘটনা কি যাত্রী নিরাপত্তার পক্ষে অশনি সঙ্কেত নয়?
হুগলি নদী জলপথ সমবায়ের প্রশাসক অজয় গিরি বলেন, “গত বছর সংস্থার তরফে রাজ্যকে দফায় দফায় চিঠি দিয়ে বলা হয়, প্রত্যেকটি জেটির রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। না হলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জেটিগুলি সারাতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা লোকসানে চলা এই সংস্থার নেই।”
এ দিন সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ১৮টি জেটির মধ্যে ৯টি যুদ্ধকালীন তত্পরতায় সারানো প্রয়োজন। না হলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এই জেটিগুলি হল: বাগবাজার, শোভাবাজার, ফেয়ারলি, মেটিয়াবুরুজ, চাঁদপাল (১ ও ২), রামকৃষ্ণপুর, শিবপুর এবং নাজিরগঞ্জ।
হুগলি নদী জলপথ সংস্থা সূত্রে খবর, এক বছর আগে শিবপুরের নবান্নে মহাকরণ উঠে আসার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, জলপথে নবান্ন যাওয়ার জন্য অবিলম্বে ওই ৯টি জেটি সংস্কার করতে হবে। এ জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রত্যেকটি জেটির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, রাজ্য সেচ দফতরকে প্রাথমিক ভাবে শুধু চাঁদপাল (২), রামকৃষ্ণপুর ও শিবপুর লঞ্চঘাট সংস্কারের জন্য ৫ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
এ দিন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতর দায়িত্ব পাওয়ার পরে এক বছরের মধ্যে তিনটি জেটির কাজ প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। বাকি জেটিগুলির দায়িত্ব রাজ্য পরিবহণ দফতর আমাদের দেয়নি। তাই করা যায়নি।”
কিন্তু গত এক বছরের বাকি ৬টি জেটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ হল না কেন? রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রথমত গঙ্গার বুকে থাকা জেটিগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিভিন্ন সংস্থার হাতে। তা সত্ত্বেও পরিবহণ দফতর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঘোষণা করেছে, যে সংস্থা জেটি সারাতে চায়, নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেলে সেই সংস্থার জন্য অর্থ মঞ্জুর করা হবে। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিতে আসেনি।”