বন্ধ ফ্ল্যাটে আগুন, উদ্ধার পোষ্য

বরাহনগরে এক বিধ্বংসী আগুনে স্থানীয় কাউন্সিলর পৃথা মুখোপাধ্যায়ের পোষ্য, ছ’বছরের পরির সন্তানদের এমন করুণ পরিণতি হলেও বৃহস্পতিবার নতুন জীবন পেল রকি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৮
Share:

রক্ষা: আগুন লেগেছিল এই ফ্ল্যাটেই (বাঁ দিকে)। উদ্ধার করার পরে রকি (ডান দিকে)। বৃহস্পতিবার, েবহালায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

এক আগুনের ‘বলি’ হয়েছিল আটটি কুকুর ছানা। অনেক চেষ্টা করেও তাদের মা পরি, এমনকি প্রতিবেশীরাও বাঁচাতে পারেননি একটিকেও। সেই ঘটনার ছ’দিনের মাথায় শহরের অন্য প্রান্তের আর একটি অগ্নিকাণ্ডে অবশ্য প্রাণে বাঁচল রকি। ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে পাঁচ বছরের পোষ্যটিকে উদ্ধার করলেন প্রতিবেশীরা।

Advertisement

বরাহনগরে এক বিধ্বংসী আগুনে স্থানীয় কাউন্সিলর পৃথা মুখোপাধ্যায়ের পোষ্য, ছ’বছরের পরির সন্তানদের এমন করুণ পরিণতি হলেও বৃহস্পতিবার নতুন জীবন পেল রকি। আর তাতেই স্বস্তির শ্বাস ছেড়েছেন পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসিন্দা তাপস দাস। তিনি বলেন, ‘‘ঘর জ্বলে যাওয়ায় হয়তো ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু রকিকে ফিরে পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে।’’ বরাহনগরের ঘটনায় প্রতিবেশীরা যত ক্ষণে পরিকে উদ্ধার করেছিলেন, তত ক্ষণে অবশ্য আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল সাত দিন বয়সী আটটি ছানার। সেই শোক আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে পৃথার গোটা পরিবারকে।

বেচারাম চ্যাটার্জি রোডের চারতলা আবাসনের একেবারে উপরের তলায় থাকেন তাপসবাবু। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। প্রায় ১৫ বছর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। একমাত্র মেয়ে তপলব্ধা পড়াশোনার জন্য মাস সাতেক আগে রাজস্থানে গিয়েছেন। ফলে রকিকে নিয়েই দিন কাটে তাপসবাবুর। প্রতিদিনের মতো এ দিনও সকালে মেয়ের ঘরটি বন্ধ করে ড্রয়িং রুমে রকির জন্য খাবার ও জল রেখে ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে তালা দিয়ে অফিসে গিয়েছিলেন তাপসবাবু। অভ্যাস মতো এ দিনও দরজার বাইরে জুতোর র‌্যাকে একটি বাক্সে ডুপ্লিকেট চাবি রেখে গিয়েছিলেন। যে চাবির খোঁজ একমাত্র জানতেন তাপসবাবুর পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।

Advertisement

এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ আচমকাই আশপাশের লোকজন দেখতে পান, তাপসবাবুর মেয়ের ঘরের দিক থেকে গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। দেখা যায়, কাচের জানলার ভিতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। এর পরেই তাঁরা ওই আবাসনে এসে অন্য বাসিন্দাদের বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে সেখানে চলে আসেন ওই পাড়ারই বাসিন্দা তথা তাপসবাবুর বন্ধু মানস গুহরায়। খবর যায় দমকলে। আবাসনের বাসিন্দাদের প্রথমেই খেয়াল হয়, তাপসবাবুর বন্ধ ফ্ল্যাটের ভিতরে রয়েছে রকি। তাকে যে ভাবে হোক উদ্ধার করতে হবে চিন্তা করেই প়ড়শি দম্পতি সমীর পাল ও মধুমিতা পাল ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে ফেলেন। পরে তাঁরা বলেন, ‘‘ডুপ্লিকেট চাবি যে রয়েছে, সেটা তখন কারও মাথাতেই আসেনি। আগে রকিকে বার করে আনতে হবে, এটাই ছিল মূল চিন্তা।’’

মানসবাবুরা জানান, দরজা ভাঙতেই দেখা যায়, ড্রয়িং রুমটি পুরো কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। আর তার মধ্যেই হাঁফাচ্ছে রকি। বেরোনোর জন্য সারা ঘরে দাপাদাপি করছে। রকিকে বাইরে এনে আবাসনের ছাদে নিয়ে গিয়ে বেঁধে রাখেন প্রতিবেশীরা। এ দিকে, খবর পেয়ে তড়িঘড়ি অফিস থেকে চলে আসেন তাপসবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমেই মনে হয়েছিল, রকির কোনও ক্ষতি হয়নি তো?’’ তাপসবাবু জানান, তাঁর মেয়ের এক বন্ধু রকিকে উপহার দিয়েছিলেন। তখন ডালমেশিয়ান প্রজাতির ওই পোষ্যটির বয়স ছিল মাত্র ২৮ দিন। সেই থেকে তাপসবাবু ও তপলব্ধাদের পরিবারেরই এক জন হয়ে উঠেছে রকি। মেয়ে পড়াশোনার জন্য ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার পর থেকে রকির জন্যই অফিস ছাড়া অন্য কোথাও যান না তাপসবাবু। এমনকি, কাছাকাছি কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে গেলেও গাড়ি ভাড়া করে রকিকে নিয়ে যান তিনি।

এ দিন আগুন লেগেছিল তপলব্ধার ঘরে। এ দিকে, দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও আগুনের উৎসস্থলে পৌঁছতে পারছিল না। স্থানীয় যুবক শ্যামল পুরকাইত এক হাতে দমকলের হোসপাইপ ধরে অন্য হাতের সাহায্যে পাইপ পেয়ে উপরে ওঠেন এবং জানলা ভেঙে জল ঢালেন। ঘটনার পরে ছাদে ‘বন্দি’ হয়ে চিৎকার জুড়েছিল রকি। তাপসবাবুর দেখা পেয়ে তবে সে শান্ত হয়েছে। প্রতিবেশীদের থেকেই ভাত এনে তাকে খাইয়েছেন তাপসবাবু। তবে ঘরে পোড়া গন্ধ থাকায় সন্ধ্যাতেও রকিকে ঘরে নিয়ে যেতে

পারেননি তাপসবাবু।

তাতে অবশ্য কিছু যায়-আসে না রকির। মনিবকে পেয়ে ছাদেই আনন্দে আটখানা হয়ে লাফালাফি জুড়েছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন