সাড়ে তিনশো টাকা বা তার বেশি দামের ওষুধ কিনলে নেওয়া হবে পুরনো ৫০০ টাকার নোট। আর হাজার টাকার নোট নেওয়া হবে ৭০০ টাকার বেশি ওষুধ কিনলে তবেই। শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশপাশের ওষুধের দোকানে এটাই এখন অলিখিত শর্ত। মানতে পারলে ভাল, না মানলে খালি হাতেই ফিরতে হবে রোগীর পরিজনকে। সাধারণ ওষুধের দোকান তো বটেই, এমনকী একাধিক মেডিক্যাল কলেজের ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানেও ছবিটা একই। যার জেরে প্রতিদিনই নাকাল হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
নোট বাতিলের ঘোষণার পরে প্রাথমিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল— ওষুধের মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত ক্রেতাদের থেকে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হবে। তা হলে শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে অন্য ছবি কেন? বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, খুচরো ফেরত দেওয়ার সমস্যার কারণে তাঁরা সব ক্রেতার থেকে পুরনো নোট নিতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই তাঁদেরও নানা রকম শর্ত আরোপ করতে হচ্ছে।
শনিবার শহরের বিভিন্ন হাসপাতালের আশপাশের ওষুধের দোকানগুলিতে ঘুরে চোখে পড়েছে ক্রেতাদের ভোগান্তির ছবি। হাওড়ার বাসিন্দা বিক্রম মণ্ডলের আত্মীয় এসএসকেএমে ভর্তি। শনিবার দুপুরে ওই তল্লাটের দশটি দোকান ঘুরে একটি দোকান থেকে পুরনো ৫০০ টাকার নোটের বদলে ২০০ টাকার ওষুধ কিনলেন তিনি। ন্যাশনালে ভর্তি সুতপা তালুকদারের জন্য একটি অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে ১০০০ টাকার নোট নিয়ে পার্ক সার্কাস চত্বর চষে ফেলেও ওষুধ পাননি তাঁর বাবা সুবল তালুকদার। আরজিকরে ভর্তি শুভ দাসের বাড়ির লোকেরা জানালেন, পুরনো নোটে ওষুধ কিনলে তাঁদের খুচরো ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। পরিবর্তে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডিউ স্লিপ।
ওষুধের দোকানের কর্মীদের পাল্টা দাবি, পুরনো নোট নিয়ে তাঁদের ঝক্কির শেষ নেই। তাই চাইলেও সকলের থেকে পুরনো নোট নেওয়া যাচ্ছে না। আর জি করের সামনে একটি দোকানের ফার্মাসিস্ট নবারুণ বেরার কথায়, ‘‘পুরনো ৫০০ টাকার নোট দিয়ে কেউ ১০০ টাকার ওষুধ কিনলে তাঁকে ৪০০ টাকা ফেরত দিতে সমস্যা হচ্ছে। তাই এখন সাড়ে তিনশো টাকার বেশি ওষুধ কিনলে তবেই পুরনো ৫০০-র নোট নিচ্ছি।’’ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি ওষুধের দোকানের কর্মী সম্রাট ঘোষ বলেন, ‘‘নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে আসেনি। কেউ ১০০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে ৩০০ টাকার ওষুধ কিনলে আমরাই বা কী করে ৭০০ টাকা ফেরত দেব?’’ এসএসকেএমের সামনের একটি দোকানের এক কর্মী আবার দাবি করলেন, প্রেসক্রিপশন দেখে যদি তাঁরা বোঝেন ওষুধগুলি জীবনদায়ী, তখন যে কোনও ওষুধের ক্ষেত্রেই তাঁরা ৫০০-১০০০ টাকার নোট নিচ্ছেন। অন্যথায় সাড়ে তিনশো বা সাড়ে সাতশো টাকার ওষুধ কেনার শর্ত না মানলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের।
বৃহস্পতিবার রাতে আর জি করের সামনে এক ওষুধের দোকানে এ ভাবেই রোগী ফেরানোকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। হাসপাতালে ভর্তি এক কিশোরের জন্য ওষুধ কিনতে ওই দোকানে গিয়েছিলেন পরিজনেরা। ১৮০ টাকার ওষুধ কিনতে ৫০০ টাকার নোট দিলে দোকানি নিতে অস্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত আরও কয়েকটি দোকান ঘুরে যাখন ওষুধটি জোগাড় হয়, ততক্ষণে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই মৃতের পরিজনেরা হাসপাতালের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাতেও অবশ্য পরিস্থিতি বদলায়নি। কম টাকার ওষুধ কিনলে শনিবারও ওই দোকানে পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ নিয়ে অসুবিধার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছে ওষুধের দোকানের মালিকদের সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের তরফে সুবোধ ঘোষ বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারে পুরনো নোট চলছে না। ক্রেতাদের থেকে সেই নোট ভাঙিয়ে পাইকারি বাজারে ওষুধ নিতে গেলে আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দোকানমালিকেরাও এ ক্ষেত্রে অসহায়। সরকারকে আমাদের দিকটাও ভাবতে হবে।’’