corona virus

চলাফেরায় অক্ষম, ভাতার টাকা তাই ব্যাঙ্কেই পড়ে

সরকারের তরফে মেয়ে অক্ষম ভাতা পেলেও লকডাউনের মধ্যে তাঁকে নিয়ে কী ভাবে ব্যাঙ্কে যাবেন, বুঝতে পারছেন না সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধা। ফলে ভাতার টাকাও ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারছেন না তাঁরা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৪
Share:

\প্রয়োজনে: মাসের শুরুতে টাকা তোলার লাইন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে। বৃহস্পতিবার, বাগুইআটিতে। ছবি: সুমন বল্লভ

কথাবার্তা অসংলগ্ন। সর্বক্ষণ কাঁপে শরীর। কোনও কিছুর সাহায্য ছাড়া সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না বেশিক্ষণ। লকডাউনের মধ্যে মানিকতলার বাসিন্দা, বছর পঁয়তাল্লিশের নমিতা দাসকে নিয়েই এখন সমস্যায় পড়েছেন তাঁর মা কল্পনা দাস। সরকারের তরফে মেয়ে অক্ষম ভাতা পেলেও লকডাউনের মধ্যে তাঁকে নিয়ে কী ভাবে ব্যাঙ্কে যাবেন, বুঝতে পারছেন না সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধা। ফলে ভাতার টাকাও ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে পারছেন না তাঁরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কল্পনাদেবী বললেন, “আমার বার্ধক্য ভাতা আর সরকার থেকে মেয়েকে যে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়, সেটাই ভরসা ছিল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ব্যাঙ্কে যেতে পারছি না। পাড়ার অটোওয়ালারাও নিয়ে যেতে চাইছেন না। বলছেন, পুলিশ মারছে।” বৃদ্ধা জানান, মানিকতলার যে ব্যাঙ্কে মেয়ের ভাতার টাকা জমা হয়, সেখান থেকে লোক বাড়ি এসে অবস্থা দেখে গিয়েছিলেন। প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের লোক এসে বাড়িতে টাকা দিয়ে যাবেন বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু গত মাস থেকে কেউ আসছেন না। স্বামীহীনা ওই বৃদ্ধা বলেন, “একটা ঘরের ভাড়া আর ওই ভাতার টাকায় সংসার চলে। ভাড়াটে বলে দিয়েছেন, এ মাসে টাকা দিতে পারবেন না। ব্যাঙ্কের নম্বরে দু’দিন ধরে ফোন করছি, কেউ ধরছেন না।”

লকডাউনের মধ্যে শহরে ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু থাকলেও ভাতার টাকা তুলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নমিতার মতো বহু প্রতিবন্ধী। তাঁদের কেউ হাঁটাচলা করতে পারেন না, কারও আবার কথা বলায় সমস্যা। অনেকেই আবার শয্যাশায়ী। ব্যাঙ্ক এত দিন বাড়িতে ভাতার টাকা পৌঁছে দিলেও লকডাউনে সে সব বন্ধ।

Advertisement

আর তার ফলেই সংসার কী ভাবে চলবে, সেই চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে হরি ঘোষ স্ট্রিটের বাসিন্দা স্নেহবালা রায়কে। মা আর প্রতিবন্ধী ভাইকে পুরনো ভাড়াবাড়িতে রেখে অন্যত্র চলে গিয়েছেন তাঁর বড় ছেলে। শয্যাশায়ী ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা আর মায়ের বার্ধক্য ভাতাই ছিল সম্বল। এর মধ্যে তিন মাসের বাড়িভাড়াও বাকি রয়েছে। ভাড়া দ্রুত না মেটালে শৌচাগার ব্যবহার করতে না-দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাড়ির মালিক। স্নেহবালাদেবী বলছেন, “ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়েই ভাড়া দেওয়া হয়নি। গত কয়েক দিন পুলিশের দেওয়া খিচুড়ি খেয়েছি। আজ একাই ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম, কিন্তু একটা কাগজ না-নেওয়ায় টাকা পাইনি। কাল আবার যাব। ব্যাঙ্কের লোক রাস্তার মেশিন থেকে টাকা তুলতে বলল। কিন্তু অত তো বুঝি না।” একই সমস্যা কালীঘাট রোডের তপন কর্মকারেরও। শয্যাশায়ী বাবার বার্ধক্য ভাতা, আর তাঁর প্রতিবন্ধী ভাতা তুলতে ব্যাঙ্কে কে যাবে,
সেটাই সমস্যা।

এমন প্রতিবন্ধীদের জন্য কী কিছু ভাবা হচ্ছে? রাজ্যের নারী ও শিশুবিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “আমাদের মানবিক পেনশন প্রকল্পে বহু মানুষ সাহায্য পান। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁদের পক্ষে টাকা তুলতে যাওয়াটা সমস্যার। সমাধান কী হতে পারে সকলের ভাবা দরকার।” মানিকতলার যে শাখায় নমিতার অ্যাকাউন্ট, সেখানে বারবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। ওই ব্যাঙ্কের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা জানান, সমস্যার সমাধানে অনলাইন ব্যাঙ্কিং করা যেতে পারে। কিন্তু যাঁরা ইন্টারনেটে স্বচ্ছন্দ নন? এসবিআই কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, লকডাউনে বাড়ি গিয়ে টাকা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এমন কেউ ব্যাঙ্কে এলে তাঁকে আগে সাহায্য করার জন্য শাখাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে বলে জানালেন এসবিআইয়ের এক কর্তা।

কিন্তু ব্যাঙ্ক পর্যন্ত পৌঁছতেই পারছেন না যে সব প্রতিবন্ধী, তাঁদের জন্য পথ কী? উত্তর অজানাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন