ব্যাধি বড়, না কি পরীক্ষার বিধি

জন্ম থেকেই দুরারোগ্য ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি’(এসএমএ)-তে আক্রান্ত সমাদৃতা চক্রবর্তী। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই কিশোরীর হাঁটাচলার ক্ষমতা একেবারেই নেই। তবু এরই মধ্যে পরীক্ষা দিতে চায় সে। কিন্তু বাদ সেধেছে নিয়ম।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০১:১২
Share:

লড়াই: নিজের ঘরে সমাদৃতা চক্রবর্তী। ছবি: সুদীপ ঘোষ

জন্ম থেকেই দুরারোগ্য ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি’(এসএমএ)-তে আক্রান্ত সমাদৃতা চক্রবর্তী। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই কিশোরীর হাঁটাচলার ক্ষমতা একেবারেই নেই। তবু এরই মধ্যে পরীক্ষা দিতে চায় সে। কিন্তু বাদ সেধেছে নিয়ম।

Advertisement

বিরাটি নবজীবন বালিকা বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী সমাদৃতা টেস্ট পরীক্ষায় ৮১ জনের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে। কিন্তু বাড়ির বাইরে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার মতো শারীরিক ক্ষমতা তার নেই। এ দিকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বিধিতে কাউকে বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিতে দেওয়ারও নিয়ম নেই। তাই উদ্বেগে দিন কাটছে সমাদৃতা ও তার পরিবারের।

সংসদের নিয়মে শয্যাশায়ীদের জন্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বাড়িতে বসে পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম নেই। সমাদৃতা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। সমাদৃতার বাবা সজল চক্রবর্তী জানালেন, এর পর থেকে তাঁর মেয়ের শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, বাড়ির বাইরে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থা আর তার নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিদেশে অসুস্থ পড়ুয়া

শারীরিক অক্ষমতার কারণে সমাদৃতার জীবনে খেলাধুলোর কোনও জায়গা নেই। বেড়াতে যাওয়ায় সম্ভব নয়। পড়ার ঘরের বিছানাটাই তার পৃথিবী। কোমরের পর থেকে বাকি সবটাই অসাড়। মেরুদণ্ড থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে গোটা শরীরটাকেই অচল করে দিচ্ছে দুরারোগ্য এসএমএ। দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। পিঠের পিছনে কাঠের ‘স্ট্যান্ড’, তাতে ভর দিয়েই কোনওমতে বিছানায় বসে পড়াশোনা করে সে।

এই অবস্থায় সমাদৃতা যাতে বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিতে পারে, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন সজলবাবু। তিনি জানালেন, বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার জন্য স্কুল শিক্ষা দফতরকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দু’-দু’বার নির্দেশ দিয়েছেন। স্কুল শিক্ষা দফতর থেকেও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছে এ বিষয়ে নির্দেশ গিয়েছে। সজলবাবুর কথায়, ‘‘ঘরে ফিরলেই দেখি, সারা ক্ষণ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে মেয়েটা। ফাইল হাতে নবান্ন, কালীঘাট, সংসদে ছুটেছি। কিন্তু কেউ কথা রাখছেন না।’’

শুক্রবার সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস বলেন, ‘‘পরীক্ষার ক’টা দিন ওই পরীক্ষার্থীকে কোনও সরকারি হাসপাতাল অথবা নার্সিংহোমে ভর্তি করে দেওয়া হোক। সেখান থেকে পরীক্ষা দিক। এ রকম একটা পরীক্ষা বাড়িতে বসে দেওয়ার কোনও নিয়ম সংসদের নেই। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন