মগ্ন: খেলায় মেতেছে পাড়ার কচিকাঁচারা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
পুরনো বাড়ি। পরিচিত গন্ধ, রাস্তার ধারে গাছের সারি, চাপা কল সবেই মিশে আছে এক আকর্ষণ আর ভালবাসা। এই নিয়েই আমার পাড়া গৌরীবাড়ি লেন। যেখানে ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমান সত্ত্বেও অন্তরের ভালবাসা সব কিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
আগে এই এলাকা পরিচিত ছিল গৌরীবেড় নামে। পুরনো মানচিত্রেও এর উল্লেখ আছে। পরেশনাথের মন্দির থেকে শুরু পাড়াটা অরবিন্দ সরণি পেরিয়ে উল্টোডাঙা রোডে মিশেছে।
বেশ পরিচ্ছন্ন এ পাড়া। জীবনযাত্রায় আছে একটা ছন্দ। যদিও বেশ কিছু বহুতল তৈরি হয়েছে। তবু পড়শিদের সঙ্গে কমবেশি যোগাযোগ এখনও আছে। দেখা-সাক্ষাৎ কমলেও এক ডাকে আজও পাশে পাওয়া যায় প্রতিবেশীকে। কিছু পুরনো বাড়ির নীচে এখনও আড্ডা বসে। অফিস ফেরত অনেকেই তাতে সামিল হন।
নানা কারণে কমেছে খেলাধুলোর চলটাও। কচিকাঁচাদের গলিতে কিংবা বাড়ির সামনে খেলতে দেখা গেলেও নিয়ম করে ছোটদের মাঠে গিয়ে খেলতে দেখি না। তবে বছরে বেশ কয়েক বার কিছু ক্লাবের উদ্যোগে হয় ক্রিকেট ও ফুটবল ট্যুর্নামেন্ট। অন্যান্য পাড়ার মতো এখানেও মিলছে নাগরিক পরিষেবা। আগে বর্ষায় জল জমলেও এখন তা তাড়াতা়ড়ি নেমে যায়। আছে পার্কিং সমস্যা। রাস্তার এক ধারে কারা যেন গাড়ি রেখে বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য উধাও হয়ে যান। এতে অনেকেরই সমস্যা হয়।
কাছেই হরি সাহার হাট। বসে প্রতি বুধ ও রবিবার। আজও হাটের বিকিকিনির ছবিটা অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও বহু মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে এই হাটের উপরে নির্ভরশীল। ৮৩ বছরের পুরনো পাড়ার দুর্গাপুজোটি উপলক্ষে এখনও ক’টা দিন মেলা বসে। এক সঙ্গে ভোগ খাওয়া, পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া— সব আছে আগের মতোই।
ছেলেবেলার পাড়ায় ছিল স্বাধীনতা উত্তর এক সংস্কৃতি। সকলের চোখেই তখন কত নতুন স্বপ্ন। বাড়িতে মা-বাবার পাশাপাশি পাড়াতুতো কাকা, জেঠা আর দাদাদের ছিল গঠমমূলক ভাবনা। মনে পড়ে পাড়ার ফুচানদার কথা। তিনি ছিলেন ডাকাবুকো। মানুষের বিপদে তিনি সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
সুখস্মৃতির পাশাপাশি আছে তিক্ত অভিজ্ঞতাও। সাতের দশকের মাঝামাঝি থেকে আটের দশকের মাঝামাঝি উত্তাল রাজনীতি অঞ্চলটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। সেই দিন বদলেছে। সেটাই প্রাপ্তি!
লেখক সরকারিকর্মী