ভেঙে পড়েছে উড়ালপুল। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ধাক্কা এখনও কাটতে উঠতে পারেনি মানুষ, কাটিয়ে উঠতে পারেনি শহর। আতঙ্ক, রাগ, দুঃখে ভরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়াল। ফেসবুকে প্রকাশিত এমনই কিছু মর্মভেদী কবিতা বেছে নিলাম আমরা।
হিম্মৎ নেই
-শতরূপা সান্যাল
আমি বেঁচে আছি, তুমিও তো বেঁচে আছ
মাথার ওপরে ভাঙেনি উড়াল পুল
ভাগ্যদেবীকে ধন্যবাদই তো দেব
খুঁজব না তবু কারা নষ্টের মূল !
যারা অক্লেশে খাবারে ভেজাল দেয়
ইমারতি মাল মশলাও জাল করে
সরকারি কাজে ঠিকা নিয়ে ধনী হয়
কার হিম্মৎ ঐ খুনিদের ধরে ?
কিছু মানুষের লোভের মাশুল দিতে
পিঁপড়ের মত মানুষ মরবে গাদা
এদেশে এখন এইটাই স্বাভাবিক
এক ফোঁটা তেলে নাচেন এখানে রাধা !
আমি বেঁচে আছি, সেটাই কি কাফি নয় ?
সচেতনতার দায় নিতে বয়ে গেছে
আমারই ট্যাক্সে যাদের বেতন হয়
তাদেরই লাঠিকে ভয় পেয়ে আছি বেঁচে !
কি লাভ ,খামখা ঝামেলা মাথায় নিয়ে ?
সকলেই জানি কোথায় গলদ ভুল
সাহসই নেই যে বলব আঙুল তুলে
এরা সব কটা যত নষ্টের মূল !!
আমাকে শুনতে পাচ্ছো?
সুদেব ভট্টাচার্য
খবর দিও আমার বডি পেলে, খবর দিও।
আমার মা চোখে দেখে না ভালো
বারান্দাতে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ।
আমার ছেলে ইস্কুলেতে গেছে, ওকে খবর দিও
বউ হয়তো বেলছিল শেষ রুটি।
এখনো টিভি চালানোর পায়নি অবকাশ।
খবর দিও পেলে আমার বডি, উড়ালপুলের নীচে
খবর দিও, হাতটা বাড়িয়ে আছি তোমার জন্য
এখনো মাছি বসেনি, টাটকা কাটা গেছে।
এখানে ভীষণ অন্ধকার, ভীষণ বদ্ধ হাওয়া
এখানে এখন অনেকগুলি শ্মশানভূমির আগুন
তুমি পারলে খবর দিও।
হেলিকপ্টার কোথায় পাব? আমি মধ্যবিত্ত।
বাস থেকে নেমে রিক্সা নেব কি না তাই তো দ্বন্দ্ব ছিল
এমন সময় আকাশ নামবে নীচে, টের পাইনি জানো।
ও ভাই একটু জল দেবে?
তিলোত্তমার সেতু আমার বুকের ওপরে শুয়ে
না, থাক তুমি প্রশ্নগুলি মিলিয়ে নাও আগে।
আমি ডান নাগরিক নাকি বাম সেটাই আসল কথা।
আমি হাত বাড়িয়েছি দেখ।
উড়ালপুলের নীচে শুয়ে পাড়ি দিচ্ছি দূরে
তুমি জল দিও না আর, বরং পাঁচ লাখ গুঁজে দাও।
আর খবরটুকু দিও, আমার বডি পেলে।
ধংসস্তূপ
কবির নাম জানা যায়নি-
একটা খুব বড় ক্রেন লাগবে
জানিস তো?
অতটা বড় একটা পাপ কে সরাতে হবে যে,
গুজব রটেছে, সিমেন্টের বদলে নাকি মাটি দিয়েছিল ঠিকাদার
হবেও বা
মানুষের দাম তো এখন মাটির মতোই।
বড় ক্রেন এসে পাথর সরাবে
কিন্তু নীচের মানুষ গুলো?
রক্ত ধুয়ে দেবে সরকারী দমকল, রাতের আঁধারে,
ছেঁড়া মাংসের টুকরো গুলোতে ভুরিভোজী হবে সারমেয় দল,
তন্নিষ্ঠা ভাববে মার আজ ফিরতে দেরী হচ্ছে কেন
উপলের মুখ গোমড়া, বাবা বলেছিল একসাথে খেলা দেখবে আজ।
যাদের বাবা মা ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরবে আজ,
তারা টিভিতে দেখা রক্তকালো দৃশ্যটা দেখে শুধাবে,
মুখ থুবড়ে ওটা কে পড়ে আছে, বিশাল চেহারার, গিরীশ পার্কের পাশে?
লোভ না সভ্যতা?
উত্তর চাপা পড়ে আছে এখন ও ওই ধংসস্তূপের নীচেই।
সেতু
যশোধরা রায়চৌধুরী
আমি তো খেজুরে শ্রেষ্ঠ, তুমি হলে বাতেলা সম্রাট
আমাদের প্রেম নেই, আধখানা সেতু থমকে আছে
পারাপার কবে হবে? পারাপার কোনোদিনও হয়?
আমি তো জানি যে , হয়না, তুমি জানো, এখনই হচ্ছে না
তুমি তো অপেক্ষা করছ কোন একটা কিছু ঘটে যাক্
কথা বলতে কথা বলতে কেটে যাচ্ছে আরো কিছু দমবন্ধ দিন
তোমার তুমির মধ্যে, আমার আমির মধ্যে ঝুলে থাকছে আধভাঙা সেতু
এর চেয়ে কথা হয়ে ফয়সালা হয়ে যেত সব
তারপর দুজনেই দ্বিধাহীন গড়িয়ে পড়তাম -
ভেঙে যেত আমাদের নীচে এক নড়বড়ে সেতু
বিঁধে থাকত সারাগায়ে অজস্র পেরেক, লোহা, কথা।
আরও পড়ুন: সংখ্যাটা শুধুই ২৩! বিশ্বাস করি না