ঘটনাস্থলে পুলিশ-পাহারা। দমদম পার্কে, রবিবার। নিজস্ব চিত্র
দমদম পার্কের নির্মাণ প্রকল্পে প্রোমোটার হিসেবে ছিল তাঁর হাতেখড়ি। সেই প্রকল্পেই দুষ্কৃতীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হলেন বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরের অন্তর্গত পোস্ট-অফিস পাড়ার বাসিন্দা শেখর পোদ্দার! রবিবার এ কথা জানিয়েছেন গুলিবিদ্ধ প্রোমোটারের ঘনিষ্ঠেরা।
দমদম পার্কে চার নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে প্রকল্পটি বিনিয়োগের মাপকাঠিতে বিরাট কিছু নয়। শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ কমবেশি চার কাঠা জমির উপরে নির্মীয়মাণ সেই পাঁচতলা বহুতলে দুই ক্রেতা ফ্ল্যাট দেখতে এসেছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁরা যখন চারতলায় ফ্ল্যাট দেখছিলেন তখনই একতলায় তোলার পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে রাজি না-হওয়ায়
শেখর এবং তাঁর সহযোগী চিরদীপ রায়কে প্রথমে শাসায় অজ্ঞাতপরিচয় দু’জন দুষ্কৃতী। এর পরে কথা কাটাকাটির মধ্যে দুষ্কৃতীদের গুলি শেখরের ডান হাতে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়েরা জানান, শেখরের গেঞ্জি কারখানার ব্যবসা রয়েছে শোভাবাজারে। পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হওয়ার পরে সেই ব্যবসা কিছুটা ধাক্কা খায়। এর পরে দমদম পার্কের বাসিন্দা চিরদীপ রায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বে তিনি প্রোমোটার হিসেবে চার নম্বর জলাধারের কাছে বহুতল নির্মাণের কাজে হাত দেন। বস্তুত, শেখর যে প্রোমোটারি শুরু করেছেন, তা এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে গোচরে এসেছে গুলিবিদ্ধ প্রোমোটারের প্রতিবেশীদের। সল্টলেকের দত্তাবাদ সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শেখর। এ দিন তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু পোদ্দার বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভয়ের কিছু নেই। তবে আমার স্বামী এখনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’’ তোলা চেয়ে হুমকি ফোন এবং শেখরের ব্যবসা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ও অনেক রকমের ব্যবসা করেছে। তবে প্রধানত গেঞ্জি কারখানার ব্যবসা আমাদের। প্রোমোটিংয়ের কাজ বেশি দিনের নয়। হুমকি ফোন নিয়েও কিছু বলতে পারব না।’’
শেখরের সহযোগী চিরদীপের এটি তিন নম্বর নির্মাণ প্রকল্প। পুলিশ জানিয়েছে, চিরদীপ লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য তাঁর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চেয়ে বাবু নায়েকের ফোন এসেছিল। সেই টাকা আদায়েই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক নির্মাণ স্থলে এসে হাজির হয়।
শনিবারের ঘটনায় এখনও আতঙ্ক কাটেনি চিরদীপের, দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের। চিরদীপ ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক নির্মাণস্থলে এসে প্রথমে মালিকের খোঁজ করেন। চিরদীপেরা জানান, তাঁরা মালিক নন। ওই নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। তাতে অবশ্য বিপদ কাটানো সম্ভব হয়নি। ঘনিষ্ঠমহলে চিরদীপের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী, তোলার টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির মধ্যে ওয়ান শটার থেকে গুলি চালানোর জন্য তৎপর হয় দুষ্কৃতীরা। তিন বার ট্রিগারে চাপ দিলেও গুলি বেরোয়নি। চতুর্থ বার ট্রিগারে চাপ পড়তেই গুলি বেরিয়ে শেখরের ডান হাতে লাগে। ঘনিষ্ঠমহলের দাবি প্রসঙ্গে চিরদীপ বলেন, ‘‘পুলিশ বিষয়টির তদন্ত করছে। আমি কিছু বলব না।’’
শনিবারই ঘটনাস্থলে এসেছিল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দল। প্রাথমিক ভাবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, কম দূরত্বে ওয়ান শটার থেকে গুলি চালানো হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ঘটনাস্থল থেকে কার্তুজের খোল পাওয়া যায়নি। জখম ব্যক্তির শরীর থেকে যে গুলি বেরিয়েছে, সেটি পরীক্ষার পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে কী ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে ফোনের সূত্র ধরে তদন্তের কিনারা করতে চাইছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। গুলি-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত বাবু নায়েকের আসল বাড়ি ওড়িশায়। পুলিশ সূত্রের খবর, দমদম পার্কের প্রকল্পের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা চেয়ে যে হুমকি ফোনও এসেছিল
ওড়িশার একটি নম্বর থেকেই। যার প্রেক্ষিতে অভিযুক্তের খোঁজে ওড়িশা যেতে পারে তদন্তকারীদের একটি দল। আপাতত গুলি কারা চালাল, তা জানতে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ দিন বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের না ধরা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলব না।’’