চিকিৎসক খুনে মিলছে না সূত্র

তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, কসবার একটি বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতেন চান্দ্রেয়ী। সংসার চলত চান্দ্রেয়ীদেবীর আয় এবং মায়ের পেনশন মিলিয়ে। জয় স্ট্যাম্প সংগ্রহ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

এই বাড়িতেই খুন হয়েছেন চিকিৎসক চান্দ্রেয়ী দাসচৌধুরী।-নিজস্ব চিত্র।

সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা, চিকিৎসক চান্দ্রেয়ী দাসচৌধুরীর (৪৮) খুনের তদন্তে এখনও পর্যন্ত কোনও নিশ্চিত সূত্র খুঁজে পেলেন না তদন্তকারী অফিসারেরা।

Advertisement

তাঁর ভাই জয় দাসচৌধুরীকে শনিবার আটক করে জি়জ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। তাঁর বক্তব্যে অসঙ্গতি মেলায় পুলিশ জেরা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, খুনের মামলা রুজু করার পরে চান্দ্রেয়ীদেবীর ভাইকে তা জানালে তিনি প্রথমে মানতে চাননি যে তাঁর দিদিকে খুন করা হয়েছে। শনিবার রাতে জেরার সময়ে অবশ্য তিনি স্বীকার করে নেন, দিদির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কে চান্দ্রেয়ীদেবীকে খুন করে থাকতে পারে, এই প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দেননি। কী ভাবে খুন হল তা পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন জয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের পরে ৫০ দিনেরও বেশি কেটে যাওয়ায় ঘটনাস্থল থেকে তথ্য-প্রমাণ মেলা কঠিন হয়ে উঠেছে। তদন্তকারীদের ভরসা করতে হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের উপরেই। যদিও এই খুনে পরিচিত কোনও ব্যক্তিরই হাত আছে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান।

Advertisement

গত ২২ মে চান্দ্রেয়ীদেবীকে অচৈতন্য অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর মা এবং ভাই। তাঁদের দাবি ছিল, ঘরের দরজা দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ ছিল। তাঁরা ডাকাডাকি করে কোনও সা়ড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখেন, চান্দ্রেয়ীদেবী অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তার পরেই তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে চান্দ্রেয়ীদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই ঘটনায় তাঁরা কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্ত পাঠানো হয়। প্রায় ৫০ দিন পরে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ জানতে পারে, চান্দ্রেয়ীদেবীর মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধ হয়ে। তাঁর শরীরের ভিতরেও আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এর পরেই পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের মামলা রুজু করে। চান্দ্রেয়ীদেবীর মা, ভাই, পরিচারিকা এবং তাঁদের আত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।

কিন্তু ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেতে এত দেরি কেন?

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ঘটনার পরে চান্দ্রেয়ীদেবীর মা এবং ভাই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা চান্দ্রেয়ীদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রাথমিক ভাবে তাই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়নি। খুন হয়েছে বলে সন্দেহ করা হলে দ্রুত ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, কসবার একটি বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতেন চান্দ্রেয়ী। সংসার চলত চান্দ্রেয়ীদেবীর আয় এবং মায়ের পেনশন মিলিয়ে। জয় স্ট্যাম্প সংগ্রহ করেন। কখনও কখনও স্ট্যাম্প কেনার আগে সেটি যাচাই করতে তাঁকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ডেকে পাঠায় লোকজন। পুলিশ জানিয়েছে, স্থায়ী কোনও কাজ তিনি করেন না। চান্দ্রেয়ীদেবীকে খুন করলে কে লাভবান হবে, তা বুঝতে পুলিশ সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই করে দেখছে। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাড়ির তিনতলায় চান্দ্রেয়ীদেবীদের বাস, বাকি তলাগুলিতে তাঁর কাকা-জেঠুরা থাকেন। মৃতার এক কাকিমা পুলিশকে জানিয়েছেন, মৃত্যুর পরে ঘটনাটি তাঁরা জানতে পারেন। কী করে চান্দ্রেয়ীদেবীর মৃত্যু হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন