মানছেন কর্তারাই

পরপর চুরির কিনারা করতে ব্যর্থ পুলিশ

খোদ পুলিশের ঘরেই হানা দিয়েছিল চোর। লক্ষাধিক টাকা, গয়না নিয়ে চম্পটও দিয়েছে সে। তার পরে দশ দিন কেটে গেলেও চোরের হদিস পায়নি লালবাজার!

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

খোদ পুলিশের ঘরেই হানা দিয়েছিল চোর। লক্ষাধিক টাকা, গয়না নিয়ে চম্পটও দিয়েছে সে। তার পরে দশ দিন কেটে গেলেও চোরের হদিস পায়নি লালবাজার!

Advertisement

অপরাধ হলে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ বারবারই তোলেন আমনাগরিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রভাবশালী না হলে চোর ধরতে তেমন সক্রিয় হন না তদন্তকারীরা। এখন লালবাজারের অন্দরেও শোনা যাচ্ছে প্রায় একই সুর। অনেকেই বলছেন, চোর ধরতে পুলিশি তৎপরতা যে কার্যত হারিয়ে গিয়েছে, তা এ বার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বাহিনীর এক পদস্থ কর্তাই। যদিও এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি।

সিঁথির বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশের সহকারী কমিশনার সুদীপ্ত নাগের বাড়িতে চুরি হয় গত ৩ জানুয়ারি। সিঁথি থানায় অভিযোগে সুদীপ্তবাবু জানান, ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা এবং ১৫ ভরি সোনার গয়না নিয়ে পালায় চোর। তার ভিত্তিতে এফআইআর রুজু করে তদন্তও করছে থানা। কিন্তু তার পরে তদন্তে অগ্রগতি হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রের দাবি।

Advertisement

একই অবস্থায় রয়েছে সিঁথি এলাকাতেই সুদীপ্তবাবুর বাড়ি থেকে এক কিমি দূরত্বে বিমান চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে চুরির ঘটনার তদন্তও। তাঁর বাড়িতে চুরি হয় ৩১ অগস্ট। স্থানীয় সিঁথি থানা থেকে শুরু করে লালবাজারের গোয়েন্দারা নানা অশ্বাস দিলেও ঘটনার তিন মাস পরেও কেউ ধরা পড়েনি।

পরপর এমন ঘটনায় স্থানীয় থানার ভূমিকা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। থানার তরফে ঢাকঢোল পিটিয়ে এলাকার রাস্তায় বাহিনী বা কর্মী-টহল দেওয়ার কথা বলা হলেও তা যে কতটা অপ্রাসঙ্গিক, কলকাতা পুলিসের বাড়ি সহ ওই এলাকায় বিভিন্ন চুরির ঘটনা ঘটার পরে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন লালবাজারের শীর্ষকর্তারা।

লালবাজার সূত্রের খবর, মূলত বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়েই দুষ্কৃতীরা হানা দেয়। অপরাধের জন্য তারা বেছে নেয় কখনও দুপুর, কখনও বা ভরসন্ধ্যা। স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়েই ফাঁকা বাড়িতে হানা দেয় চোরেরা।

পুলিশ জানায়, বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে সিঁথি থেকে সরশুনা— বিভিন্ন জায়গায় একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। আনন্দপুর থানা এলাকার একটি বাড়িতে চুরির ঘটনায় দুষ্কৃতীরা গৃহকর্ত্রীর আই ফোন, ল্যাপটপ সহ বহু জিনিস নিয়ে গিয়েছিল। নিয়ম মতো পুলিশে অভিযোগও করেন গৃহকর্ত্রী। দুষ্কৃতীরা তাঁর মোবাইলটি ব্যবহার করছে, এটা তিনি পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

একের পর এক চুরি, এবং তা ঠেকাতে না পারা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, চুরি ঠেকানো না গেলেও কেন সুদীপ্ত নাগের মতো দাপুটে অফিসারের বাড়িতে চুরির ১০ দিন পরেও গোয়েন্দারা দুষ্কৃতীদের ধরতে পারছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

লালবাজারের একটি অংশ জানিয়েছে, বছর দেড়েক আগে চুরি দমন শাখার দুই দক্ষ অফিসারকে বদলি করা হয়। তার পর থেকেই কার্যত ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে ওই বিভাগ। যার ফল, ১০ দিন পরেও পুলিশকর্তার বাড়িতে চুরির কিনারা না হওয়া। যদিও এ কথা মানতে নারাজ বাহিনীর শীর্ষকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন