police

Police: কোর্টের নথিতে তথ্য বিকৃতি, তদন্তের নির্দেশ

আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১ জানুয়ারি কড়েয়া থানার পুলিশ মণীশ সিংহ নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৩
Share:

আদালতের হেফাজতে থাকা মামলা সংক্রান্ত একটি নথিতে তথ্য বিকৃতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার তদন্ত করে অবিলম্বে সেই রিপোর্ট পেশ করতে বুধবার কলকাতা পুলিশকেই নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শুভ্রসোম ঘোষাল।

Advertisement

আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১ জানুয়ারি কড়েয়া থানার পুলিশ মণীশ সিংহ নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই মামলা দায়ের করেছিল। গ্রেফতারের পরে অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক তাঁকে চার দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সেই হেফাজত শেষ হলে অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যান।

অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার পরে তাঁর আইনজীবী আদালতে জানান, পয়লা জানুয়ারি মণীশকে আদালতে পেশ করার সময়ে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তাঁর শরীরে কোথাও আঘাত লাগেনি। কিন্তু সে দিন তাঁর বাঁ চোখে গুরুতর চোট ছিল। কারণ, পুলিশি হেফাজতে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। ওই আইনজীবী দাবি করেন, আদালতে মণীশকে পেশ করার আগে সরকারি হাসপাতাল তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তাতে সেই আঘাতের উল্লেখ ছিল। অথচ, প্রথম দিন আদালতে জমা দেওয়া পুলিশি রিপোর্টে লেখা হয়েছিল ‘নো ইনজুরি’।

Advertisement

অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার পরে সরকারি হাসপাতাল থেকে সেই রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। দেখা যায়, তাতে চোখের আঘাতের বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবীর অভিযোগ, অভিযুক্তের তরফে এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দেখা যায়, সেখানকার জেনারেল রেকর্ড বিভাগে থাকা পুলিশের ‘ইনজুরি রিপোর্ট’-এর বয়ানটাই বদলে গিয়েছে।

পুলিশি রিপোর্টের বয়ান কী ভাবে বদল করা হয়েছিল বলে অভিযোগ?

পুলিশের ওই রিপোর্টে ইংরেজিতে ‘নো ইনজুরি’ লেখা হয়েছিল। কিন্তু পরে অক্ষরগুলি বদলে দেওয়া হয়। ‘এন’-এর আগে একটি ‘ও’ যোগ করা হয় এবং ‘এন’-এর পরে থাকা ‘ও’-কে পাল্টে ‘ই’ করে ‘ওয়ান’ লেখা হয়। শুধু তা-ই নয়, শব্দের মাঝে ওই ‘এন’ ছিল বড় হাতের। নীচে অন্য পেনের কালি দিয়ে লিখে দেওয়া হয় ‘লেফট আই’। মণীশের আইনজীবীর অভিযোগ, গ্রেফতারির পরে থানার ভিতরে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে মণীশকে বেধড়ক মারধর করেছিলেন এক তদন্তকারী অফিসার। তাতেই চোখে আঘাত পান তিনি।

এ হেন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সব দিক খতিয়ে দেখে বিচারক কড়েয়া থানায় থাকা ওই মামলার সমস্ত নথির প্রতিলিপি এবং ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, আদালতের হেফাজতে থাকা ওই পুলিশি রিপোর্টের তথ্য বিকৃতি কী ভাবে ঘটে থাকতে পারে, সে বিষয়ে কলকাতা পুলিশের কর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে। তার পরেই অভিযোগের শুনানি করা হবে বলে আদালত সূত্রের খবর। গোটা বিষয়টি বিচারাধীন হওয়ায় কলকাতা পুলিশের কর্তারা কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এই ঘটনায় বিস্মিত আলিপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আদালতের জেনারেল রেকর্ড সেকশনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নথিও নিরাপদ নয় বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন