এক দিকে রবীন্দ্র সদনের সামনে ক্যাথিড্রাল রোডে রাজ্য সরকারের রবীন্দ্র জয়ন্তী উদ্যাপন, অন্য দিকে ইডেনে আইপিএল— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফর চলাকালীন এই দুই কমর্সূচিই আপাতত মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের কাছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে মোদীকে নিশানা করে আল কায়দার হুমকি।
পুলিশ সূত্রের খবর, সফরসূচি অনুযায়ী আগামী ৯ মে শনিবার বিকেলে কলকাতায় এসে প্রধানমন্ত্রী বারবারই এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল এবং রেড রোড ধরে যাতায়াত করবেন। সে ক্ষেত্রে এক দিকে যেমন তাঁকে ক্যাথিড্রাল রোডে অনুষ্ঠানস্থলের কাছাকাছি এলাকা দিয়ে যেতে হবে, তেমনই রাজভবনের দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকতে হবে ইডেনের ভিড় পেরিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি কী ভাবে সুনিশ্চিত করা যায়, তা নিয়েই এখন ব্যস্ত কলকাতা পুলিশের কর্তারা। তবে প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের পথ চূড়ান্ত করা হবে আজ, বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ত্বে থাকা ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ (এসপিজি) শহরে আসার পরে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, দু’দিনের এই রাজ্য সফরে শনিবার বিকেলে দমদম বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে পৌঁছবেন রেসকোর্সে। এর পরে রেসকোর্স থেকে সড়কপথে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট রোড এবং সাদার্ন অ্যাভিনিউ হয়ে প্রথমে নজরুল মঞ্চে এবং পরে শরৎ বসু রোড হয়ে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা মোদীর। এর পরে রাতে রাজভবনে ফেরার কথা রয়েছে তাঁর।
তবে প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি পথ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কারণ, ওই সময়েই পূর্ব-নির্ধারিত আইপিএল ম্যাচের কারণে সাধারণ মানুষের ভিড় থাকবে ইডেন ও সংলগ্ন এলাকায়। ফলে মোদীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুলিশকর্তারা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান শেষে মোদীর কনভয় হাজরা রোড দিয়ে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি হয়ে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ , এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল, রেড রোড হয়ে রাজভবনে পৌঁছবে। ওই সময়ে রেড রোড, গভর্নমেন্ট প্লেস-এ ইডেনের দর্শকদের রাস্তা পারাপার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে পুরো বিষয়টিই চূড়ান্ত হবে এসপিজি আসার পরে।
এ দিকে, দুপুর থেকে ক্যাথিড্রাল রোডে রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মোদীর নিরাপত্তার খাতিরে এসপিজি ওই অনুষ্ঠানসূচি ছাঁটকাট করতে বললে কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা।
এর পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই এক ভিডিওবার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁদের নিশানা বলে জানিয়ে দিয়েছে আল কায়দা। এই বিষয়টিও বাড়তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে।
বেলুড় সফর নিয়ে। সফরের দ্বিতীয় দিনে রাজভবন থেকে সড়ক পথে বেলুড় মঠ দর্শনে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে হাওড়া সিটি পুলিশের। কারণ, প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে বেলুড়ে এলে যে সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করতে হত, সড়কপথে নিরাপত্তা দিতে তার তিন-চার গুণ বেশি পুলিশ প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে ১০ মে সকালে রাজভবন থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে কোনা, সলপ পেরিয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বালি খাল হয়ে জিটি রোড দিয়ে বেলুড় মঠে পৌঁছবে। ফেরার পথে জিটি রোড ধরে প্রধানমন্ত্রী যাবেন বালি খালের কাছে জুটমিল মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে। সেখান থেকেই হেলিকপ্টারে আসানসোল।
প্রথমে জানা ছিল, এই সফর পুরোটাই হবে হেলিকপ্টারে। বালি বা বেলুড় মঠ সংলগ্ন কোনও একটি অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নেমে সেখান থেকে মঠে যাবেন মোদী। এতে শুধু বালি খাল থেকে বেলুড় মঠ পর্যন্ত আড়াই কিমি পথে পুলিশি ব্যবস্থা রাখলেই চলত। কিন্তু রাজভবন থেকে জাতীয় সড়ক হয়ে বেলুড় মঠ প্রায় ৪০ কিমি। অতটা রাস্তা জুড়ে পুলিশি নিরাপত্তা দিতেই এখন হিমশিম হাওড়া জেলা পুলিশ-প্রশাসন।