আহত এক পশুপ্রেমী। নিজস্ব চিত্র
আন্দোলনরত পশুপ্রেমীদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার গভীর রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে এই ঘটনায় পুলিশের লাঠির ঘায়ে ১৫ জন পশুপ্রেমী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তও ওই ঘটনায় আহত হন বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ লাঠি চালানোর অভিযোগ মানতে চায়নি।
পুলিশ বরং দাবি করেছে, স্বাস্থ্য ভবনের সামনের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। মাঝরাতে সেখানে ড্রাম বাজিয়ে শান্তি বিঘ্নিত করছিলেন বিক্ষোভকারীরা। আপত্তি করায় মহিলা পুলিশকর্মীদের গালিগালাজ করা হয়। পুলিশ ধরতে গেলে আন্দোলনকারীরা পালিয়ে যান। পুলিশের দাবি, ওই ঘটনার পরেও বাকি বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন করেছেন। ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি আরও দাবি করেছেন, আন্দোলনরত পশুপ্রেমীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হলে পুলিশ আরও আগেই নিতে পারত। রাত ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না। যদিও তথাগত বলেছেন, ‘‘সিঙ্গুরের পরে ফের রাতের অন্ধকারে পুলিশকে মুখ ঢেকে মারতে দেখলাম। আইনি
পরামর্শ নিচ্ছি।’’
সম্প্রতি ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ (এনআরএস) হাসপাতালের দুই নার্সিং পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছিল। তবে জামিন-যোগ্য ধারা হওয়ায় শিয়ালদহ আদালত তাঁদের জামিন দেয়। এর পরেই ওই দুই ছাত্রীকে এনআরএস থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন পশুপ্রেমীরা। মঙ্গলবার দুপুরে করুণাময়ী থেকে মিছিল করে তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনে যান। দুপুরে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করার পরেও সমাধানসূত্র না মেলায় রাস্তায় বসে পড়ে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন পশুপ্রেমীরা। রাতে সেই বিক্ষোভ-কর্মসূচিতেই পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ।
অভিনেতা তথাগত বলেন, ‘‘সারাক্ষণ আমায় আর দেবলীনাকে চলে যেতে বলছিল। পরে বুঝলাম ওঁদের উদ্দেশ্য কী!’’ তাঁর দাবি, পশুপ্রেমীরা রাস্তায় বসে স্লোগান দিচ্ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ গিয়ে উঠে যেতে বলে। অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় রাত ১টা নাগাদ প্রান্তিক চট্টোপাধ্যায় নামে এক পশুপ্রেমীকে চড় মারেন এক পুলিশকর্মী। এর পরেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ চড়-থাপ্পড় ও লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। অভিনেতা দেবলীনার আরও অভিযোগ, তাঁকে এক মহিলা পুলিশকর্মী রাস্তায় ফেলে মারধর করেছেন। তথাগত বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেছি, আমাদের সঙ্গে অনেকে আছেন, যাঁরা রাতে বাড়ি ফিরতে পারবেন না। বুধবার এমনিই সরকারি দফতর ছুটি। সকালে সবাই চলে যাবেন। কিন্তু পুলিশ কোনও কথাই শোনেনি।’’
ঘটনার নিন্দায় এ দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকেই। এক জনের পোস্ট, ‘কুকুরছানা মারল নার্স। পুলিশ মারল পশুপ্রেমীদের’। আর এক ব্যক্তির পোস্ট, ‘চেনা পুলিশের থেকে অচেনা কুকুরে বিশ্বাস করা ভাল’। অভিনেতা তথাগতের বক্তব্য, ‘‘এ ভাবে মেরে আন্দোলন কমবে না, বরং বাড়বে।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়বাবু জানিয়েছেন, সব কিছু খতিয়ে দেখে নার্সদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।