আইনের ফাঁক গলে কী ভাবে ছটপুজো, উঠছে প্রশ্ন

মঙ্গলবার ছটপুজোর সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রীও। তিনি অবশ্য আদালতের নির্দেশ পালনের দায়িত্ব পুলিশ ও কেএমডিএ-র উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫১
Share:

নাকের ডগায়: অবাধে রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকছেন পুণ্যার্থীরা। পুলিশ দর্শক। বুধবার সকালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী ছটের আরও খবর পৃঃ ১৪

রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো নিয়ে অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে ছ’টি পৃথক মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তার মধ্যে চারটিতে জামিন-অযোগ্য ধারা রয়েছে। সূত্রের খবর, কেএমডিএ কর্তৃপক্ষও রবীন্দ্র সরোবর থানায় আলাদা অভিযোগ করেছেন। যদিও এই তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের মতে, আদালতের নির্দেশ পালন করেনি প্রশাসন। এ নিয়ে আদালতের তোপের মুখে পড়তে হবে আঁচ করেই কি মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছে? বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও মামলাতেই কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

Advertisement

মঙ্গলবার ছটপুজোর সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রীও। তিনি অবশ্য আদালতের নির্দেশ পালনের দায়িত্ব পুলিশ ও কেএমডিএ-র উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই বলছেন, সোমবারও কেএমডিএ জানিয়েছিল, পুজো রুখতে ব্যবস্থা নেবে। তা হলে কি প্রশাসনের উপরতলার নির্দেশেই পুণ্যার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হল? কেএমডিএ-র তরফে তার সদুত্তর মেলেনি।

জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে কোনও পুজো বা বিসর্জন করা যাবে না। বাজি পোড়ানো বা শব্দদূষণও ছিল নিষিদ্ধ। সোমবার দু’টি সংগঠন ছটপুজোর অনুমতি চাইতে গেলেও আদালত কান দেয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর থেকেই পুণ্যার্থীরা অনুষ্ঠান করেছেন। শুধু তাই নয়, বাজি পোড়ানো হয়েছে। বুধবার সকালেও দেখা গিয়েছে এক চিত্র। অথচ সরোবর চত্বরে আদালতের নির্দেশ জানিয়ে প্রচুর বোর্ড টাঙানো রয়েছে। এক পরিবেশকর্মী বলছেন, ‘‘ছটপুজোয় আসা লোকেদের নিয়ম ভাঙা দেখে মনে হচ্ছিল, আদালতকে উপহাস করতেই যেন ওই বোর্ডগুলি টাঙানো।’’

Advertisement

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার জেরেই রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ নিয়ে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘এই অবমাননার জন্য কেএমডিএ এবং পুলিশ আধিকারিকদের কড়া শাস্তির আর্জি জানাব। এই অপরাধে শাস্তি না হলে পরিবেশ আদালত সম্পর্কে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে।’’ ছটপুজো মিটতেই অবশ্য রবীন্দ্র সরোবর সাফ করতে তৎপর হয়েছে কেএমডিএ। কিন্তু তার ফলেও পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্য দিকে, বেলেঘাটার সুভাষ সরোবরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু করে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিনা বাধায় চলেছে পুজো। সরোবরের এক রক্ষী বলেন, ‘‘বেশির ভাগ মানুষ সারা রাত সরোবর চত্বরে ছিলেন। নিয়ম মতো সন্ধ্যা ৭টার পরে গেট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ছটপুজোর জন্য গেট বন্ধ করা হয়নি।’’ এ দিন সুভাষ সরোবরে গিয়ে দেখা গেল, চার দিকে ভাসছে ফুল-মালা ও পুজোর সামগ্রী। ছড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল ও মাটির ভাঁড়।

সুভাষবাবু বলেন, ‘‘সুভাষ সরোবর নিয়ে শীঘ্রই পরিবেশ আদালতে মামলা করব।’’ সরোবরের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র এক আধিকারিক অবশ্য বলেছেন, ‘‘সরোবর সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ যদিও কী ভাবে টানা দু’দিন পুজো চলল, তার উত্তর মেলেনি।

রবীন্দ্র সরোবরে পুজো নিয়ে পুলিশের বক্তব্য, পুণ্যার্থীরা জোর করে ঢুকেছেন। ছট পালন নিয়ে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশও মানা হয়নি। সরোবর চত্বর থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে নিষিদ্ধ ডিজে বক্স ও বাজি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, মহিলা ও শিশুদের সামনে রেখে জোর করে ঢোকা হয়েছে। তাই বাধা দিতে পারেননি পুরুষ পুলিশেরা। তবে মঙ্গলবার বিকেলে এবং বুধবার সকালে মোতায়েন থাকা পুলিশকর্মীরা যে বাধা দিতে তৎপর হয়েছেন, এমন ছবিও চোখে পড়েনি। মঙ্গলবার কেএমডিএ-র বেসরকারি রক্ষীরাও জানিয়েছিলেন, পূজার্থীদের ভিতরে ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার নির্দেশ তাঁদের কাছে ছিল না।

এখানেই উঠছে প্রশ্ন। প্রথমত, রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো গত বছর থেকে নিষিদ্ধ হলেও পুণ্যার্থীদের সংগঠনের সঙ্গে কেএমডিএ বৈঠক করেছিল কি? দ্বিতীয়ত, পুণ্যার্থীদের ভিন্ন জায়গা খুঁজে নেওয়ার কথা কি আগাম বলা হয়েছিল? তৃতীয়ত, তা হলে কি শেষে ঘুরপথে পুজোর ব্যবস্থা করে দিতেই চেয়েছিলেন প্রশাসনের একাংশ? সদুত্তর মিলছে না কিছুরই।

প্রশাসন সূত্রেই বলা হচ্ছে, ছটপুজো নিয়ে শেষ সময়ে বৈঠক হয়েছিল। তার ভিত্তিতে লালবাজার থেকে কেএমডিএ-র কাছে নিরাপত্তা বাড়াতে গেট বন্ধ রাখা, মহিলা রক্ষী মোতায়েন-সহ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই পরামর্শ পালন করা হয়নি। এই প্রশ্নও উঠেছে, কেন সরোবর চত্বরের আগেই পুণ্যার্থীদের আটকে দেওয়া হল না?

তারও উত্তর মিলছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন