কোর্টের পথে সৌমেন। পিছনেই আক্রান্ত সঞ্চয়িতা। নিজস্ব চিত্র
ঘাবড়ে গিয়েছিলেন দমদম থানার তদন্তকারী অফিসারও। জেদি তরুণীকে তখন থামায় কার সাধ্য! সামনে অভিযুক্ত যুবক। সে মুখ সরানোর আগেই সপাটে পর পর চড় কষিয়েছেন ২৪ বছর বয়সি মেয়েটি। আর চিৎকার করছেন, ‘‘পারবি আমার চোখটা ফেরত দিতে! আমায় না কি ভালবাসতিস তুই? ফিরিয়ে দে আমার পুরনো জীবন, এখনই।’’
অ্যাসিড-পোড়া চোখে উপচে পড়ছে জল আর জ্বালা। সোমবার, বেলা ১১টা নাগাদ দমদম থানার ভিতরের ঘরে এই দৃশ্যে থমকে গিয়েছিলেন সকলে। সাড়ে তিন বছর বাদে মুখোমুখি অ্যাসিডদগ্ধ তরুণী সঞ্চয়িতা যাদব ও অভিযুক্ত সৌমেন সাহা। নষ্ট চোখের নকল মণি খুলে সৌমেনকে জখম তরুণীর প্রশ্ন, ‘‘এই ক্ষতি কী ভাবে পুষিয়ে দিবি?’’
২০১৪-র সেপ্টেম্বরে দমদমে সঞ্চয়িতার বাড়ির কাছেই ‘প্রাক্তন প্রেমিক’ সৌমেন সাহা তাঁর মুখে অ্যাসিড মেরেছিল বলে অভিযোগ। সৌমেন ও তার আত্মীয়েরা সঞ্চয়িতাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিয়েছে বলেও অভিযোগকারিণীর দাবি। অভিযুক্ত যুবককে কেন ধরা যাচ্ছে না, জানতে চেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে রিপোর্ট চেয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। রবিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বোড়ালে একটি জলের কারখানা ঘিরে ফেলে পুলিশ। সেখানেই রক্ষীর কাজ করত সৌমেন। পুলিশের দাবি, পালাতে গিয়ে একটি ঝিলে পড়ে যায় অভিযুক্ত। জলে ঝাঁপিয়ে তাকে ধরে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, ‘‘ওই কারখানার লোকেরাই সৌমেনকে প্রশ্রয় দিচ্ছিলেন। তাই গ্রেফতারে দেরি হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: গণপিটুনি ঠেকিয়ে চোরকে চা সীমার
এ দিন সকালে দমদম থানায় গিয়েছিলেন সঞ্চয়িতা ও হাইকোর্টের আইনজীবী ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় চাকরির সূত্রে এখন অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়েই কাজ করছেন সঞ্চয়িতা। বলছিলেন, ‘‘চোখ ফেরাতে পারবি কি না, জিজ্ঞেস করার পরে ও ‘হ্যাঁ’ বলে। শুনে আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি!’’
এ দিন বিকেলে ব্যারাকপুর কোর্টে তোলা হয় সৌমেনকে। বিচারক তাঁকে ৯ এপ্রিল অবধি জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।