প্রতীকী ছবি।
রাস্তাঘাটে মহিলাদের কটূক্তি করা বা তাঁদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। এ বার পাড়ার মধ্যে সেই অভিযোগ উঠল খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে চারু মার্কেট থানার প্রিন্স বখতিয়ার শাহ রোডে। মহিলার চিৎকারে অবশ্য হাতেনাতে ধরা পড়ে যান ওই পুলিশকর্মী। পরে চারু মার্কেট থানার পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য নাদিয়াল থানার কনস্টেবল পদে রয়েছেন।
বছর ৪৮-এর ওই মহিলার অভিযোগ, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ তিনি পাড়ার দোকান থেকে ফিরছিলেন। সঙ্গে স্থানীয় একটি বাচ্চা কথা বলতে বলতে আসছিল। বাড়ির কাছাকাছি মোড়ে পৌঁছতেই একটি মোটরবাইক তাঁর পথ আটকায়। ওই মহিলাকে বাইকচালক সরাসরি ‘তুমি’ সম্বোধন করে জানতে চান, তিনি তাঁকে চিনতে পারছেন কি না। হেলমেট পরা এক জনকে রাতে চেনা সম্ভব নয় জানিয়ে মহিলা তাঁকে হেলমেট খুলতে বলেন। কিন্তু তার পরেও তিনি ওই ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি। অভিযোগ, এ কথা বলার পরে বাইকচালক পুলিশ পরিচয় দিয়ে মহিলাকে তাঁর সঙ্গে শ্যামবাজারে এক রেস্তোরাঁয় যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
অপরিচিত এক জন এমন প্রস্তাব দেওয়ায় মহিলা আর কিছু না বলে বাড়ির দিকে এগোতে থাকেন। তিনি অভিযোগে আরও জানিয়েছেন, হঠাৎই কৃষ্ণকমলবাবু বাইক থেকে নেমে তাঁর হাত ধরে টানার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মহিলা চিৎকার শুরু করেন। সঙ্গে থাকা বাচ্চাটি মারফত পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের ডাকতে পাঠান। নিজেও চারু মার্কেট থানায় ফোন করে সাহায্য চান।
কিন্তু তার পরেও ওই পুলিশ কনস্টেবল দমেননি। মহিলাকে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘আমার কাছে প্রচুর পয়সা রয়েছে। আমি তোমাকে খাওয়াতে নিয়ে যাব।’’ মহিলার আরও দাবি, নিজের ক্ষমতা জাহির করতে ওই ব্যক্তি জানান, তাঁর সঙ্গে পুলিশের উপরতলার যোগাযোগ রয়েছে।
এরই মধ্যে পাড়ার ক্লাব থেকে লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে কৃষ্ণকমলবাবুকে ধরে ফেলেন। মিনিট কুড়ি পরে পৌঁছয় চারু মার্কেট থানার পুলিশ। কিন্তু ওই গৃহবধূ ও এলাকার অন্য বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ওই কনস্টেবলকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। তাঁরা আরও অভিযোগ করেছেন, পুরো ঘটনা শুনে কৃষ্ণকমলবাবুকে ভ্যানে তোলার আগে এক পুলিশকর্মী তাঁর পরিচয়পত্র লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু অভিযোগকারিণী মহিলা ওই ব্যক্তির পরিচয় জানার দাবি তোলেন। অন্য বাসিন্দারাও পুলিশকে ওই লোকটির পরিচয় বলার জন্য চাপ দেন। তখনই জানানো হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি নাদিয়াল থানায় কনস্টেবল পদে রয়েছেন।
শুক্রবার ওই গৃহবধূ বলেন, ‘‘২৭ বছরেরও বেশি সময় এই এলাকায় রয়েছি। মেয়েকে নিয়ে একা থাকি। কখনও কেউ একটা খারাপ কথাও বলেনি।’’ কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে পাড়ার মধ্যেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ায় ভয় পেয়েছেন তিনি। মহিলার কথায়, ‘‘মেয়ে রাতে অফিস থেকে ফেরে। ভয় হয়, যদি ওকেও কিছু করে!’’ কিন্তু অভিযুক্ত তো গ্রেফতার হয়েছেন? ওই গৃহবধূর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ভ্যানে ওঠার পরেও অভিযুক্ত ‘দেখে নেব’ বলে হুমকি দিয়েছে। ভয় কাটবে কী করে!’’