সাহেবের বাড়ি কোনটা? বললেই এক ডাকে চিনিয়ে দিতেন বারাসতের বরিশাল কলোনির যে কেউ। বছর পঁচিশের সাহেবকে ওই বয়সের আর পাঁচটা ছেলের মতোই চিনত গোটা পাড়া। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরে তারই বাড়িতে মিলল জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড তৈরির যন্ত্রপাতি।
রাজারহাটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রতারণার তদন্তে নেমে পুলিশ সাহেব ও তাঁর সঙ্গীদের গ্রেফতারের পর ওই ঘর থেকেই মিলেছে কয়েকশো জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কিছু প্যান কার্ড। পুলিশ জানায়, সাহেব ও তার সঙ্গীরা প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১০০-১৫০টি জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও প্যান কার্ড তৈরি করত। বিধাননগরের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, ২০০৭ থেকে তারা এ কাজ করছে। সেই হিসেবে কয়েক হাজার জাল নথি তৈরি হয়েছে। খোঁজ চলছে আরও কয়েক জনের।” পুলিশের অনুমান, এই ভুয়ো প্যান কার্ড দুষ্কৃতীদের হাতে যেতেই পারে। বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডেও ভুয়ো পরিচয়পত্র বানিয়ে রাজ্যে অনুপ্রবেশের সূত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এক তদন্তকারী জানান, এই চক্র কাদের ভুয়ো পরিচয়পত্র সরবরাহ করেছিল, জানার চেষ্টা হচ্ছে। সাহেবের পরিবার কতটা জানত, তা-ও দেখছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দিতে হত ২৫০০ টাকা, প্যান কার্ডে আর একটু বেশি। পুলিশ জানায়, চক্রটি ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরিতেই বেশি দক্ষ ছিল। গাড়ির জাল ব্লু বুক, জাল প্যান কার্ডও তৈরি করত।
কী ভাবে তা তৈরি হত? পুলিশের দাবি, তাদের সামনে ধৃতেরা কয়েক মিনিটে প্যান কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়েছে। এক তদন্তকারী জানান, প্যান কার্ডের হলোগ্রামও তারা অনেকাংশেই জাল করে বলে জানা গিয়েছে।
গত রবিবার বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ এই প্রতারণা চক্রকে ধরে। প্রথমে ধরা পড়ে অমিত বিশ্বাস ওরফে আসাদুল জামাল। তাকে জেরা করে দমদম ক্যান্টনমেন্ট থেকে ধরা পড়ে দীপঙ্কর গুপ্ত। দীপঙ্করকে জেরা করে ধরা হয় বারাসতের সাহেব দাস ও তাপস কর্মকারকে। তাদের কাছ থেকে কম্পিউটর, প্রিন্টার, ডেবিট কার্ডের নকল চিপ, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাল প্যান কার্ড ও নকল চিপ মেলে। উদ্ধার হয় পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাল রবার স্ট্যাম্পও।
পুলিশের সন্দেহ, রাজারহাট-নিউ টাউনের কিছু এলাকায় ভুয়ো পরিচয়পত্র নিয়ে থাকেন মানুষ। সেই এলাকাগুলিও বিধাননগর কমিশনারেট চিহ্নিত করেছে। তবে পুলিশের দাবি, সন্দেহজনক কারও পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে বেশির ভাগ লোকই সেটির প্রতিলিপি দেখান। বলেন, আসলটা দেশের বাড়িতে আছে, যা বেশির ভাগ সময়েই কলকাতার বাইরে হয়। আর প্রতিলিপি দেখে আসল-নকল বোঝা যায় না। তবে এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “খুব সন্দেহজনক কিছু দেখলে আমরা দেশের বাড়িরও খোঁজ করি। বিভিন্ন ভাবে এলাকাবাসীদেরও সচেতন করছি। বাড়িতে অচেনা কেউ ভাড়া এলে সবিস্তার তথ্য থানায় জমা দিতেও অনুরোধ করছি।”