‘ভাল’ পুলিশের হাত ধরে ঘরে ফিরলেন বৃদ্ধ

পুলিশ সূত্রের খবর, অমরকান্তি হোর নামে ওই বৃদ্ধ ব্যারাকপুরের সিএমডিএ নগরের বাসিন্দা। রবিবার অমরকান্তিবাবু বেলেঘাটায় ছোটো মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০২:০৩
Share:

বিদায়: বাড়ি ফেরার আগে অমরকান্তিবাবু। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

ভোরের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। ভিজে চুপচুপে জামাকাপড় আর বগলে মশারি নিয়ে ফুটপাথ ধরে একা হেঁটে চলেছেন এক বৃদ্ধ। হসপিটাল রোডে টহল দিতে গিয়ে হেস্টিংস থানার সাব-ইনস্পেক্টর রোহিত চট্টোপাধ্যায়ের চোখে পড়ে এই দৃশ্য। সন্দেহ হওয়ায় শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। কথা বলতেই রোহিতবাবু বুঝতে পারেন, স্মৃতিভ্রমে পথ হারিয়েছেন ওই বৃদ্ধ।

Advertisement

শুধু কথা বলেই দায় এ়ড়িয়ে যাননি ওই পুলিশ অফিসার। বরং ওই বৃদ্ধকে বুধবার ভোরে গাড়িতে চাপিয়ে থানায় এনে বসান। হেস্টিংস থানার কর্মী ও অফিসারদের তৎপরতায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘরে ফিরে গেলেন ওই বৃদ্ধ।

পুলিশ সূত্রের খবর, অমরকান্তি হোর নামে ওই বৃদ্ধ ব্যারাকপুরের সিএমডিএ নগরের বাসিন্দা। রবিবার অমরকান্তিবাবু বেলেঘাটায় ছোটো মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। খবর পেয়ে এ দিন অমরকান্তিবাবুর পরিজনেরা হেস্টিংস থানায় এসে ফিরিয়ে নিয়ে যান তাঁকে।

Advertisement

কী ভাবে এত তাড়াতাড়ি খোঁজ মিলল ওই বৃদ্ধের পরিবারের?

আরও পড়ুন: ‘গোপন’ আধারে তর্ক সমকামও

পুলিশ সূত্রের খবর, হেস্টিংস থানার ওসি প্রতাপ বিশ্বাস ওই বৃদ্ধের ছবি তুলে পুলিশ অফিসারদের তিনটি হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়েছিলেন। তারই একটি গ্রুপে ছিলেন পশ্চিম বন্দর থানার ওসি পার্থপ্রতিম দাস। তিনি প্রতাপবাবুকে জানান, তাঁর এক পরিচিতের আত্মীয় মঙ্গলবার থেকে নিখোঁজ। হতে পারেন, ওই বৃদ্ধ সেই নিখোঁজ ব্যক্তি। এর পরেই পার্থবাবু ওই বৃদ্ধের ছবি তাঁর পরিচিতের কাছে পাঠান। জানা যায়, তিনিই সেই ব্যক্তি। এর পরেই অমরকান্তিবাবুর পরিবারের লোকেরা থানায় আসেন।

থানায় ঢুকতেই দেখা গেল, ওসি-র ঘরে স্ত্রী, কন্যা, নাতি, নাতনি নিয়ে বসে রয়েছেন অমরকান্তিবাবু। চা খেতে খেতে গল্প আর খুনসুটিতে ব্যস্ত অমরকান্তিবাবু। রোহিতবাবুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘আপনারা খুব ভাল। বিপদে পড়লে লোককে খুব সাহায্য করেন। আপনি এক দিন আমার বাড়ি যাবেন।’’ নাতনির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘আমি আছি বলেই তো ও এত দূর প়়ড়াশোনা করেছে।’’ নাতনি অবশ্য কোন ক্লাসে পড়ে তা মনে করতে পারেননি অমরকান্তিবাবু।

বড় মেয়ে অনিন্দিতা দত্ত জানান, দীর্ঘদিন আগে জুটমিলের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তাঁর বাবা। আ়ড়াই বছর ধরে অ্যালঝাইমার্সে ভুগছেন। ছোট মেয়ের বাড়ি থেকে উধাও হওয়ার পরে দিনভর খোঁজাখুঁজি করা হয়। সন্ধান না পেয়ে বেলেঘাটা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। থানায় বসে অনিন্দিতাদেবীর স্বীকারোক্তি, ‘‘পুলিশের নাম শুনলেই কেমন একটা খারাপ ধারণা হয়। আজ পুলিশের ভাল রূপটাও চিনলাম।’’

ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে এগারোটা। কাগজপত্রে সই করার পরে অমরকান্তিবাবুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এরই মাঝে কথা বলে চলেছেন তিনি। কে বলবে, কয়েক ঘণ্টা আগে পথ হারিয়ে ঘুরছিলেন রাজপথে। নিজেই চালকের পাশের আসনে বসে পড়লেন।

গা়ড়ি ছাড়ার আগে জানলা দিয়ে রোহিতবাবুর দিকে হাত নেড়ে বললেন, ‘‘চলি। থ্যাঙ্ক ইউ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন