হকার হটাতে নেমে লাথিতে জখম সার্জেন্ট

ব্যবধানটা ১২ ঘণ্টারও নয়। আলিপুর থানার পরে মহানগরে ফের আক্রান্ত পুলিশ। শুক্রবার সকালে আলিপুরে সরকারি কাজে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। পরে থানার মধ্যেই আক্রান্ত হতে হয় তাদের। লালবাজার জানাচ্ছে, বেআইনি হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে এ দিনই বিকেলে মার খেয়েছেন গরফা থানার এক সার্জেন্ট। তাঁর নাম সৌরভ ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৬
Share:

প্রহৃত সার্জেন্ট সৌরভ ভট্টাচার্য। শুক্রবার। ছবি: আর্যভট্ট খান।

ব্যবধানটা ১২ ঘণ্টারও নয়। আলিপুর থানার পরে মহানগরে ফের আক্রান্ত পুলিশ।

Advertisement

শুক্রবার সকালে আলিপুরে সরকারি কাজে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। পরে থানার মধ্যেই আক্রান্ত হতে হয় তাদের। লালবাজার জানাচ্ছে, বেআইনি হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে এ দিনই বিকেলে মার খেয়েছেন গরফা থানার এক সার্জেন্ট। তাঁর নাম সৌরভ ভট্টাচার্য। আলিপুরে পুলিশ পাঁচ জনকে ধরলেও মূল অভিযুক্তদের টিকি ছোঁয়ার সাহস পায়নি। গরফায় সাত মহিলা-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে ধৃতদের ছাড়ার দাবিতে থানা ঘেরাও করেন হকারেরা।

পুলিশি সূত্রের খবর, ইএম বাইপাস-যাদবপুর কানেক্টরের সার্ভিস রোডের বিস্তীর্ণ অংশ হকারদের দখলে চলে গিয়েছিল। ৭ নভেম্বর ওই এলাকার পুলিশ ও পুরসভা হকার উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু তার পরেও ফের হকারেরা ওই রাস্তায় বসছিলেন। এ দিন বিকেলে সেই খবর পেয়ে সৌরভ হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যান। সেই সময় একটি হকার সংগঠনের মিছিল সেখানে পৌঁছয়। সৌরভকে একা পেয়ে হকারেরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। শুরু হয় বচসা, ধাক্কাধাক্কি। অভিযোগ, কথা কাটাকাটির মধ্যে আচমকাই সৌরভের তলপেটে লাথি মারা হয়। খবর পেয়ে গরফা থানার ওসি-র নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী গিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। এম আর বাঙুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সৌরভকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, আলিপুরের মতো থানা আক্রান্ত না-হলেও শহরের বুকে পুলিশকর্মীদের আক্রান্ত হওয়া নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরফার এই ঘটনার আগে গত রবিবার কসবা থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই রাতে নিয়ম ভাঙা এক মোটরবাইক আরোহীকে আটকাতে গিয়ে মার খেয়েছিলেন অরিন্দম পণ্ডা নামে ওই অফিসার। তার আগে সন্তোষপুরে এক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে আইন ভাঙার অভিযোগে মামলা করতে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাসের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছিল দুই পুলিশ অফিসারকে। পুলিশকতার্দের হিসেব বলছে, গত এক মাসে শহরে এই নিয়ে ছ’বার পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটল।

লালবাজারের একাংশ বলছেন, পুলিশকে মারধর করলে গ্রেফতার করাটাই রীতি। কিন্তু পুলিশের একাংশের অভিযোগ, হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ লঘু করা হয়। কখনও আবার আপসেই মিটিয়ে নিতে চাপ দেন ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা। যেমন, সন্তোষপুরের ঘটনায় শাসক দলের কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়নি। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন নেন। এক পুলিশকর্তার কথায়, “কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে মারলে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তা করা হয়নি।”

এ দিন পুলিশকে মারধরের পরে হকারদের ছাড়াতে সক্রিয় হয়েছিল তাদের সংগঠনও। তবে আলিপুরের মতো তারা থানা আক্রমণ করেনি। রাত ৮টা নাগাদ গ্রেফতারের প্রতিবাদে গরফা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় সংগঠন। তাদের নেতা সাধন নস্করের বক্তব্য, হকারেরা পুলিশকে মারেনি। পুলিশই লাঠিপেটা করছিল। সেই সময়েই হুড়োহুড়িতে ওই সার্জেন্ট পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন। সাধনবাবু সাফ বলে দিয়েছেন, “পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করা চলবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন