ছিনতাইয়ে ধৃত খোদ পুলিশই

কম দামে সোনা কিনতে এসে কয়েক দিন আগেই বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়েছিলেন দুই ব্যবসায়ী। পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়িতে চেপে এসে তাঁদের হাত থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চম্পট দিয়েছিল সাফারি পরিহিত চার যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪০
Share:

কম দামে সোনা কিনতে এসে কয়েক দিন আগেই বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়েছিলেন দুই ব্যবসায়ী। পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়িতে চেপে এসে তাঁদের হাত থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে চম্পট দিয়েছিল সাফারি পরিহিত চার যুবক। ঘটনার তদন্তে নেমে ৯ দিন পরে পুলিশ যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল তাঁদের মধ্যে এক জন নিজেই পুলিশ অফিসার!

Advertisement

শুধু তাই নয়। পুলিশ জানায়, ধৃত এএসআই অনিমেষ দে-ই পুরো ছিনতাইটির পরিচালনা করেছিল। দীর্ঘ দিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কনস্টেবল থাকার পরে পদোন্নতি পেয়ে সেখানেই এএসআই হয় অনিমেষ। বর্তমানে সে হাড়োয়া থানার সার্কেল ইনস্পেক্টরের রিডার পদে ছিল। ধৃত পাঁচ জনকে বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তাদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।

পুলিশ জানায়, ৩০ অগস্ট নাগেরবাজারের বাসিন্দা নবীন দাস ও ঋষি গুপ্তের কাছে কম দামে সোনা বিক্রির জন্য ফোন আসে। কথা হওয়ার পরে ওই দুই ব্যবসায়ীকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অপেক্ষা করতে বলে। সেই মতো ওই দিন নবীন ও ঋষি এক্সপ্রেসওয়ের সিসিআর ব্রিজে উপরে টাকা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। ফোনের কথা মতো দুই যুবকও এসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদাম নিয়ে কথা শুরু করে। কিছু পরেই পুলিশ স্টিকার লাগানো একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। দুই ব্যবসায়ী কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ি থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে চার যুবক। কিছু না বলে ওই ব্যবসায়ীদের হাতে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে ফের এয়ারপোর্টের দিকে চম্পট দেয়। ঘটনার পরে যে দুই যুবক সোনা বিক্রি করতে এসেছিল তারাও চলে যায়।

Advertisement

অল্প সময়ের মধ্যে কি ঘটে গেল তা প্রথমে বুঝতে পারেননি নবীন ও ঋষি। তবে ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পরে তাঁরা বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথমে ওই ব্যবসায়ীরা দাবি করেছিলেন, সাড়ে ৩১ লক্ষ টাকা ছিনতাই হয়েছে। পরে তাঁরাই আবার পুলিশি জেরায় পাঁচ লক্ষ টাকা খোয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে ছিনতাইবাজদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ওই দুই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও দেরিতে অভিযোগ দায়ের করা, মিথ্যা টাকার অঙ্ক বলার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, অভিযোগ পেয়ে বেলঘরিয়া থানার পুলিশ ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দারা যৌথ ভাবে তদন্ত শুরু করেন। প্রথমেই ওই পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়িটির সন্ধান মেলে। গাড়ির সূত্র ধরেই অনিমেষের সন্ধান পায় পুলিশ। এর পরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ থেকে তার সার্ভিস বুক ও বাড়ির ঠিকানা-সহ অন্য তথ্য জোগাড় করেন তদন্তকারীরা। বুধবার রাতে নদিয়ার শিমুরালি থেকে ওই এএসআইকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করেই আমডাঙা থেকে সৈফুদ্দিন মণ্ডল, মহম্মদ সোলেমন ও বারাসত থেকে কিশোর দে, করিম মণ্ডলকে ধরা হয়। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দাপ্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘ছিনতাইয়ের দলে আরও তিন জন রয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।’’

পুলিশ জানায়, অনিমেষই পুরো ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল। এর পরে তারা নাগেরবাজারের ওই ব্যবসায়ীদের ফোন করে কম দামে সোনা কেনার টোপ দেয়। পরে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওই পুলিশ অফিসারের দলেরই দুই যুবক এসে দরদাম করছিল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সেই সময় দূরে গাড়িতে বসে ছিল অনিমেষ। তার নির্দেশ মতোই পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়িতে চেপে চার জন ছিনতাই করেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন