তৈরি হচ্ছে বইমেলার গেট।
বইমেলার স্থান বদল নিয়ে প্রথম থেকেই কিছু আশঙ্কা ছড়িয়েছিল নানা মহলে। তবে দিন যত এগোচ্ছে, সব চিন্তাই গিয়ে কার্যত জট পাকাচ্ছে যানজট-আতঙ্কে।
আজ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের করুণাময়ী মোড়ের কাছে স্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণে ৪২তম কলকাতা বইমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। তারই আগে সোমবার দেখা গেল, পুলিশি ব্যস্ততা তুঙ্গে। এক দিকে দৈনন্দিন অফিসযাত্রী ও সল্টলেকবাসীর নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে এবং অন্য দিকে, বইমেলার জনসমাগমের জন্য যান চলাচল সুনিশ্চিত করতে হবে। সল্টলেক মেলা-প্রাঙ্গণের সামনের ওই রাস্তা এত যান চলাচলের চাপ নিতে পারবে কি না, তা নিয়েই ঘনীভূত হচ্ছে দুশ্চিন্তার মেঘ। পুলিশের অন্দরেও তা ছেয়ে গিয়েছে। ফলে শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি-পর্ব খতিয়ে দেখতে এ দিন সল্টলেকে একযোগে দেখা গেল কলকাতা এবং বিধাননগরের দুই পুলিশ কমিশনার, রাজীব কুমার এবং জ্ঞানবন্ত সিংহকে।
বইমেলা প্রাঙ্গণের ঠিক সামনেই সল্টলেকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি এলাকা। এক দিকে করুণাময়ীর মোড়, অন্য দিকে ময়ূখ ভবন। কাজের দিনে ব্যস্ত সময়ে এমনিতেই সে চত্বরে বহু মানুষের আনাগোনা। তার উপরে বইমেলা ঘিরে আরও কয়েক হাজার বেশি মানুষ এবং গাড়ির ভিড় হবে আগামী ক’দিন। তার জন্য কতটা ভোগান্তি হবে, চিন্তায় বাসিন্দা থেকে অফিসযাত্রী। এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে কেমন প্রস্তুতি হচ্ছে, প্রশ্ন তাঁদের অনেকেরই।
পুলিশ সূত্রে খবর, বইমেলার সামনের রাস্তায় বাস কিংবা ভারী গাড়ির যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করুণাময়ী মোড়মুখী বাসগুলি অন্য রাস্তা দিয়ে ঘোরানো হবে। পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে উল্টোডাঙাগামী যে বাসগুলি করুণাময়ী দিয়ে যায়, অন্য পথে ঘোরানো হবে সেগুলিও। এ ভাবে প্রয়োজন মতো করুণাময়ী মোড়ের উপর থেকে গাড়ির চাপ কমানো হবে। পাশাপাশি, বইমেলার সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপারও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বইমেলায় আসা গাড়ির জন্যও হয়েছে ব্যবস্থাপনা। মেলা প্রাঙ্গণের উল্টো দিকে হয়েছে পার্কিং লট। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক গাড়ি রাখা যাবে সেখানে। রাস্তা পারাপারের জন্য ব্যবহার করা হবে মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ি। পুলিশকর্তাদের কথায়, বইমেলা চত্বরকে কেন্দ্র করে ৩০০-৫০০ মিটার এলাকার মধ্যেই অতিরিক্ত বিভিন্ন রুটের কমবেশি ২০০টি বাস, অটো, ক্যাবের স্ট্যান্ডও করা হয়েছে। এ ছাড়াও, সল্টলেকে ট্র্যাফিক পরিচালনার জন্য পুলিশ থাকবে।
ট্র্যাফিক ব্যবস্থা
• চার চাকার গাড়ির পার্কিং- বইমেলার উল্টো দিকে
উন্নয়ন ভবন এবং এইচএসবিসি ভবনের মাঝে।
• অটো- ইন্দিরা ভবন থেকে ময়ূখ ভবনের সার্ভিস রোড এবং
করুণাময়ী মোড় থেকে দশ নম্বর ট্যাঙ্কের সার্ভিস রোডে।
• ক্যাব- ইন্দিরা ভবন থেকে ময়ূখ ভবনের সার্ভিস রোড
বইমেলা স্পেশাল বাস
• (প্রায় ২০০টি)-করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড, সিকে-৫৬, মিউনিসিপ্যাল স্কুল মোড়, সিজে-১৭২,
বিকাশ ভবন, ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক, ২০৬ বাসস্ট্যান্ড, জিডি বাস টার্মিনাস,
মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে সিটি সেন্টারের সার্ভিস রোড প্রমুখ।
‘ইন্টারন্যাশনাল কলকাতা বুকফেয়ার’ মোবাইল অ্যাপ
• মেলার মাঠে কোথায় কী আছে, বলে দেবে অ্যাপ
• কোন অডিটোরিয়ামে কী অনুষ্ঠান রয়েছে, জানা
যাবে তা-ও। সঙ্গে পরিবহণ ও পার্কিং সম্পর্কে তথ্য।
পার্কিং অ্যাপ
• আইকেবিএফ-বিএমসি কার পার্কিং
যানজট ঠেকাতে কোনও গাড়িই বইমেলার সামনে দাঁড়ানোর অনুমতি পাবে না। ফলে মেলার সামনে গাড়ি থেকে ওঠা-নামা করা যাবে না। গাড়ি পার্কিং লটে পৌঁছনোর জন্য ভিন্ন রাস্তা চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, বাইরে থেকে আসা অনেকেই ধাঁধিয়ে যাবেন এ সব রাস্তা খুঁজে পেতে। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, বইমেলা, পার্কিং লট, বাস-অটো-ক্যাবের জায়গা চিহ্নিত করতে সল্টলেক জুড়ে পথ নির্দেশিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি, বইমেলা কমিটি এবং বিধাননগর পুরসভা দু’টি পৃথক অ্যাপ চালু করছে। সেই অ্যাপ ডাউনলোড করলে ম্যাপ-সহ বিস্তারিত সব তথ্য মিলবে। প্রতিটি গেটে সেই অ্যাপ সম্পর্কে তথ্য থাকছে।
পুলিশ এত ব্যবস্থার কথা বললেও অবশ্য সংশয়েই রয়েছেন বাসিন্দারা। যদিও পুলিশ প্রশাসনের অনুমান, রোজ ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ লোকের সমাগম হবে বইমেলা ঘিরে। সেই অনুসারেই পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এমনকী, ভিড় মাপতে ক্রাউড কাউন্টিং মেশিনও বসানো হচ্ছে।