ভিড় টানার ক্ষেত্রে কলকাতার সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরেই টক্কর দিচ্ছে বিধাননগর কমিশনারেট অঞ্চলের পুজোগুলি। ফলে বিধাননগরে পুজোর দিনে বেড়েছে গাড়িও।
মোটরবাইক ও চার চাকা গাড়ির বেপরোয়া চলাচল আগেও কলকাতার চেয়ে বেশি বেকায়দায় ফেলেছিল বিধাননগর পুলিশকে। সঙ্গে পথ দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে ছিনতাই, শ্লীলতাহানির ঘটনা রুখতে হিমসিম খেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সেই অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে এ বার বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তাতেই এসেছে সাফল্য। পথ দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে ছিনতাই, শ্লীলতাহানির ঘটনা কমেছে। তবে এ বার সবেচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে মোটরবাইকের দাপাদাপি রোখার ক্ষেত্রে।
পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত পথ দুর্ঘটনা, চুরি-ছিনতাই নিয়ে মোট ৩১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার মধ্যে ৩০টির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাবে কেস শুরু করা হয়েছে। কেস দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৩০০ গাড়ির বিরুদ্ধেও।
পুলিশ সূত্রেই খবর, চতুর্থীর রাতে ভিড়ের চাপে কিছুটা বেসামাল হতে হয়েছিল। তাদের ট্রাফিক পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনাও হয়। কিন্তু পঞ্চমী থেকেই জোরকদমে পথে নামে বাহিনী। সেই থেকে দশমীর রাত পর্যন্ত পরীক্ষায় পাশ পুলিশ।
এড়ানো যায়নি সব দুর্ঘটনা। পুজোর দিনগুলিতে ৫টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আহত হয়েছেন ৪ জন। তবে হেলমেট ছাড়া মোটরবাইকে এবং বেপরোয়া যান চলাচল রোখার ক্ষেত্রে বিশেষ নজির তৈরি করেছে বিধাননগর পুলিশ। ফলে দুর্ঘটনাও কমেছে বলে দাবি পুলিশের।
তবে মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর খেসারতে দুর্ঘটনা নতুন করে ভাবিয়েছে বিধাননগর পুলিশকে। সপ্তমীর রাতে সিজিও কমপ্লেক্সের কাছে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন চার যুবক। অষ্টমীর রাতে সিটি সেন্টারের কাছে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক মোটরবাইক চালকের।
সল্টলেক থেকে শুরু করে ভিআইপি রোড, রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে, নিউ টাউন, বিমানবন্দর অঞ্চলের যশোহর রোডে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হেলমেট ছাড়া অসংখ্য মোটরবাইক চালককে ধরা হয়েছে, তেমনই বাইকবাহিনীর দাপাদাপিও উধাও হয়েছে। চোখে পড়েনি মোটরবাইকের রেসও।
ভিড় নিয়ন্ত্রণেও সাফল্য পেয়েছে পুলিশ। বিশেষত লেকটাউন, শ্রীভূমি, বাগুইআটি, কৈখালি এবং সল্টলেকের এ কে, এ জে, বি জে, এফ ডি, লাবণি আবাসন, বি ই (পূর্ব), এ ই (পার্ট ওয়ান)-এ ভিড় বেড়েছে কয়েক গুণ। তা সফল ভাবে সামালও দিয়েছে পুলিশ। ভিআইপি রোড, রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে এবং সল্টলেকের কয়েকটি প্রবেশপথে অবশ্য যানজটে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে দর্শনার্থীদের।
পুলিশের দাবি, যানজট মুক্ত করতে এবং গাড়ির গতি বজায় রাখতে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। নতুন এই ট্রাফিক পরিকল্পনায় কিছুটা হলেও সমস্যার বেড়েছে বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের একাংশের। তবে ট্রাফিক পরিকল্পনার চেয়েও পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের জায়গার অভাবে ভুগেছেন গাড়িচালকেরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, বড় বড় পুজোর ক্ষেত্রে পার্কিং-এর জায়গা মেলেনি। কোথাও কোথাও আবার পার্কিংয়ের জায়গা খুঁজতেই বহু সময় নষ্ট হয়েছে।
বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা জানান, পুজোর আগেই পুজো গাইড প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে এর পরে পুজো সম্পর্কে তথ্য আরও আগে জানানোর ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করা হবে।
বিধাননগর পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ জানান, এখনও পর্যন্ত বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় যানজটের সমস্যা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে গাড়ির গতি খানিকটা কমেছে। তবে পুজোর দিনগুলিতে অভিযান চালানোয় বেপরোয়া ভাবে যান চলাচল, বিনা হেলমেটে মোটরবাইক চালানো কিছুটা হলেও কমেছে।
প্রতি বছর বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় ফাঁকা রাস্তায় বিশেষত রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে, নিউ টাউনের রাস্তায় মোটরবাইকের রেস কিংবা ২০-২৫ জনের বাইক গ্যাং দেখা যায়। পুলিশের এক কর্তা জানান, এ বছর প্রতি দিন অভিযান চালানো হচ্ছে। ফলে এখনও পর্যন্ত ওই ধরনের বেপরোয়া যান চলাচলের খবর নেই।
দশমীতে ভিআইপি রোড, নিউ টাউন, রাজারহাটের বিভিন্ন ঘাটে ইতিমধ্যেই কমিশনারেট এলাকার বহু পুজোর বিসর্জন হয়ে গিয়েছে।