এত দিন কলকাতার রাস্তায় সিসিটিভির ফুটেজে নজরদারির দায়িত্বে ছিল লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম। পুজোর শহরে নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতে এ বার আরও বাড়ছে সিসিটিভির সংখ্যা। যেগুলিতে নজরদারির ভার স্থানীয় থানাগুলিকেই দেবে কলকাতা পুলিশ। আপাতত পুজোর ভিড়ের দুই ‘হট স্পট’ বৌবাজার এবং গড়িয়াহাটে ওই বাড়তি সিসিটিভি বসবে। স্থানীয় থানায় বসে যার ফুটেজে নজরদারি চালাবে পুলিশ। এত দিন নজরদার-ক্যামেরা বসত রাজপথেই। নতুন ব্যবস্থায় অলিগলিতে বসবে সিসিটিভি।
অপরাধ রুখতে এখন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং বড় রাস্তায় প্রায় পাঁচশো সিসিটিভির ফুটেজে নজর রাখে লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুম এবং ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম। পুলিশ সূত্রে খবর, নতুন ব্যবস্থায় এ বার বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিয়ে কোলে মার্কেট থেকে লালবাজার পর্যন্ত প্রায় শ’খানেক ক্যামেরা বসছে। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ওই এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে তাঁদের কথা হয়েছে। পুজোর আগেই ওই ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। যা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হবে স্থানীয় থানা থেকে। এর জন্য বৌবাজার ও মুচিপাড়া থানায় তৈরি হচ্ছে পৃথক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বা কন্ট্রোল রুম। পুলিশ জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টা ওই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নজরদারি চালানো হবে। এর জন্য থানায় সব সময়ে থাকবেন এক জন অফিসার-সহ দু’জন করে পুলিশকর্মী।
এর পাশাপাশি গড়িয়াহাটের ফুটপাথ-সহ ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গাতেও বসছে সিসিটিভি। পুলিশের একাংশ জানিয়েছেন, প্রতিদিন পুজোর বাজার করতে আসা কয়েক হাজার মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই ওই এলাকার দোকানদারদের সাহায্য নিয়ে ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।
লন্ডন হোক বা মুম্বই, জঙ্গি হামলার তদন্তে কেল্লাফতে হয় সিসিটিভির দৌলতেই। কলকাতাও তার থেকে বাদ পড়েনি। পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, ২০০৫ সালে লন্ডন মেট্রোয় বিস্ফোরণে দোষীদের সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই চিহ্নিত করা হয়। মুম্বইয়ের ২৬/১১-র হামলাতেও আজমল কাসবের বিরুদ্ধে অকাট্য তথ্যপ্রমাণ হিসেবে উঠে আসে ক্যামেরার ফুটেজ। কিছু দিন আগে হায়দরাবাদের দিলসুখনগরে বিস্ফোরণের পরেও ওই জায়গায় সিসিটিভি-র ছবি ঘেঁটেই তদন্তে নেমেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এ শহরও বছরখানেক আগে সিসিটিভির নজরবন্দি হয়েছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “বর্তমানে ৫০০টি ক্যামেরার ছবিতে নজরদারি চলছে লালবাজারের মূল কন্ট্রোল রুম ও ট্রাফিক কন্ট্রোলরুম থেকে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রাফিক গার্ডগুলিতে এলাকা-ভিত্তিক কন্ট্রোলরুম তৈরি হয়েছে।” এমনকী লালবাজারের কর্তারা চাইলে নিজেদের মোবাইলের নির্দিষ্ট অ্যাপসের সাহায্যে এলাকার ওপর নজরদারি চালান। পুলিশ সূত্রের খবর, এ শহরেও একাধিক অপরাধের কিনারা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বসানো সিসিটিভির মাধ্যমে। একাধিক ছিনতাই এবং খিদিরপুরে ধর্ষণের ঘটনার কিনারাও হয়েছিল সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্যে।
নজরদারির এই নতুন ব্যবস্থার বিশেষত্ব কোথায়? লালবাজার সূত্রে খবর, এত দিন সব ক্যামেরাই বসেছে মূল রাস্তায় বা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। কিন্তু এ বার ওই সব এলাকায় পুজোর আগেই মূল রাস্তা ছাড়াও ভিতরে এবং আশপাশের অলিগলিতে বসবে নজরদার ক্যামেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এলাকায় রাস্তার দু’ধারে রয়েছে সারি সারি সোনার দোকান। সঙ্গে রয়েছে কোলে মার্কেট এবং বৈঠকখানা বাজার। নতুন ব্যবস্থায় ওই এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় সমান নজরদারি চালানো যাবে বলে পুলিশকর্তারা মনে করছেন।