—প্রতীকী ছবি
শুধু গাড়ির ধোঁয়া নয়, নির্মাণসামগ্রীর ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে শহর। শহরের বাতাসের মান নিয়ে তাই আরও বেশি নজরদারি দাবি করেছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। কলকাতার বাতাসের গুণমান সম্পর্কে সার্বিক তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও শহরে স্বয়ংক্রিয় স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে জায়গা। কারণ, অটোমেটিক স্টেশন করার জন্য যে পরিমাণ জায়গা ও উপযুক্ত পরিবেশ দরকার, তা এ শহরে প্রায় নেই বললেই চলে। এ বার তাই জায়গার জন্য কলকাতা পুরসভার দ্বারস্থ হয়েছে পর্ষদ।
পুরসভা সূত্রে খবর, দেশবন্ধু পার্ক, বিডন স্কোয়ার ও ম্যাডক্স স্কোয়ারে তিনটি নতুন ‘কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন’ (সিএএকিউএম) তৈরির জন্য জায়গা চেয়েছে পর্ষদ। সে প্রস্তাব পুর প্রশাসনের বৈঠকে গৃহীতও হয়েছে। ওই তিনটি জায়গা পুরসভা ও পর্ষদের প্রতিনিধিরা পরিদর্শনও করেছেন। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের তরফে সবই করা হয়েছে। পর্ষদকে জানানোও হয়েছে।’’
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, বর্তমানে শহরে দু’টি স্বয়ংক্রিয় ও ১৭টি কর্মী নিয়ন্ত্রিত স্টেশন রয়েছে। সারা রাজ্যে স্বয়ংক্রিয় স্টেশনের সংখ্যা আটটি ও কর্মী নিয়ন্ত্রিত স্টেশন রয়েছে ৭৭টি। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ, কর্মী নিয়ন্ত্রিত স্টেশনের চেয়ে স্বয়ংক্রিয় স্টেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য বলেই জানাচ্ছেন পর্ষদ কর্তাদের একাংশ। কলকাতার মোট এলাকাকে কয়েকটি ‘গ্রিডে’ ভাগ করা হয়েছে। সেই গ্রিড অনুযায়ী প্রতি তিন-চার কিলোমিটার অন্তর একটি করে স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে সারা শহরের বাতাসের গুণমান সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণা করা যায়। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘স্বয়ংক্রিয় স্টেশন তৈরির জন্য ছ’ মিটার বাই পাঁচ মিটারের মতো জায়গা লাগে। সেই জায়গাটা আবার ফাঁকা হতে হবে। কিন্তু কলকাতায় ফাঁকা জায়গা পাওয়াই তো মুশকিল!’’ পর্ষদ সূত্রের খবর, ওই তিনটির পাশাপাশি সায়েন্স সিটি, বিআইটিএম, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, সল্টলেক-সহ আরও কিছু জায়গায় এমন স্বয়ংক্রিয় স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাতাসের গুণমান বা ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে’র দুই প্রধান নির্ধারক হল ভাসমান কণা (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম কণা (পিএম ২.৫)। প্রতি ঘন মিটারে পিএম ১০-এর সহনশীল মাত্রা ১০০ মাইক্রন ও পিএম ২.৫-এর সহনশীল মাত্রা ৬০ মাইক্রন। কিন্তু শহরের বাতাস সেই সহনশীল মাত্রা প্রায়ই অতিক্রম করেছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।
পর্ষদের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ শহরে বায়দূষণের মূল কারণ নির্মাণসামগ্রীর ধুলো। নির্মাণকাজ বৃদ্ধির কারণে ভাসমান কণার পরিমাণও বাড়ছে। বিশেষ করে শীতের সময়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। কারণ, শীতকালে শহরে বাতাসের গতি প্রায় থাকে না বললেই চলে। ফলে তা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এ ভাবে বাতাসে ভাসমান কণা জমতে থাকে। এক পর্ষদকর্তার কথায়, ‘‘কলকাতায় শীতে বাতাসের গতি সাধারণত পাঁচ-সাত কিলোমিটার থাকে। মুম্বই বা অন্য শহরে দূষণ বেশি হলেও বাতাসের গতি বেশি থাকায় পরিস্থিতি এতটা জটিল হয় না।’’