সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় এ রাজ্যের ‘শো-কেস’ এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট মুখ থুবড়ে পড়েছে।
চিকিৎসক নেই। নেই অত্যাবশ্যক বেশ কিছু সরঞ্জামও। সব মিলিয়ে আক্ষরিক অর্থেই আতান্তরে নবজাতকদের এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সঙ্কট একেবারেই সাম্প্রতিক নয়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে ডাক্তার এবং সরঞ্জামের অভাবের কথা স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়ে আসছেন ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। খারাপ হতে হতে পরিস্থিতি এখন এমনই যে, এ ভাবে আর কিছু দিন চললে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
স্বাস্থ্য দফতরের নথি থেকে দেখা যাচ্ছে, নিওনেটোলজি বিভাগের তরফে একাধিক বার কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে এ কথা জানানো হয়েছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে লেখা চিঠিতে তাঁরা জানান, ওই কেন্দ্রে ৮৪টি সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটের শয্যা রয়েছে। কিন্তু সে জন্য এক জন মেডিক্যাল অফিসারও দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নিয়মিত ‘ইনটেনসিভ কেয়ার’-এর ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। যত দিন না আলাদা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, তত দিন অন্য ভাবে মেডিক্যাল অফিসারের ব্যবস্থা করে এই পরিস্থিতি সামলানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, যে শিশুরা এসএনসিইউ-তে ভর্তি হচ্ছে, তাদের বড় অংশই শ্বাসকষ্টের শিকার। ইকোকার্ডিওগ্রাফি, এক্স-রে ও ইউএসজি প্রয়োজন হচ্ছে যখন তখন। অথচ, করা যাচ্ছে না। সিপ্যাপ বা মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটর দরকার। সেটাও সকলের ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে কিছু পোর্টেবল এক্স-রে, বাবল সিপ্যাপ, নিওনেটাল ইউএসজি যন্ত্র প্রয়োজন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টা রুগ্ণ শিশুদের পরিচর্যা দিতে গেলে যা যা দরকার তা তাদের নেই। আর না থাকার ফলে পরিষেবার মানের সঙ্গে বড়সড় আপস করতে হচ্ছে। এর পরে বড় কোনও বিপর্যয় ঘটে গেলে তার দায় কে নেবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
এ রাজ্যে রুগ্ণ নবজাতকদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছিল পিজি। ক্ষমতায় আসার পরে এই আদলেই বিভিন্ন জেলায় এসএনসিইউ গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল সরকার। ডাক্তারের অভাব সব ক’টিতেই। কিন্তু এই পরিষেবার পথিকৃৎ যে ইউনিটটি, তারই এমন বেহাল দশায় বাকি ইউনিটগুলিরও অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হবে বলে মনে করছেন শিশু চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই। তাঁদের বক্তব্য, যেখানে মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমানোর বিষয়টিকে মুখ্যমন্ত্রী এত গুরুত্ব দেন, সেখানে এমন এক কেন্দ্রের বেহাল দশা কেন?
মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে তৈরি হওয়া টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করে নিয়েছেন, ডাক্তারের অভাব রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ইউনিটে রুগ্ণ শিশুরা ভর্তি থাকে। তাই ওখানে ডাক্তার বেশি দরকার। চেষ্টা চলছে ঘাটতিটা মেটানোর। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’
আর সরঞ্জাম? এ ক্ষেত্রে অবশ্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘টাকার কোনও অভাব নেই। ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে ওই কেন্দ্রের জন্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আর একটু উদ্যোগী হতে হবে।’’ কিন্তু যেখানে কর্তৃপক্ষ একাধিক বার লিখিত ভাবেই সরঞ্জাম চাইছেন, সেখানে উদ্যোগের অভাবটা তাঁদের, নাকি স্বাস্থ্যকর্তাদের? সেই উত্তর পাওয়া যায়নি।