এখনও এমন অবস্থায় নরেন্দ্রপুরের কিছু এলাকা। (ডান দিকে) গ়়ড়িয়ার খুড়িগাছি খাল পরিদর্শনে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
রোগ ধরলেন পুর-চেয়ারম্যান। আর ওষুধ বাতলে দিলেন সেচমন্ত্রী।
একটু বেশি বৃষ্টিতেই জমছে জল। যা বেরোতে না পেরে ঘুরছে পুর-এলাকার অন্দরেই। এক ওয়ার্ড থেকে এক দিকে পাম্প দিয়ে জল নামিয়ে দেওয়ার পর ফের ঘুরপথে পুরোনো জায়গায় ফিরছে জল। রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকায় বর্যার জল ফেঁসে গিয়েছে এমনই গোলক ধাঁধায়। সৌজন্য, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নাব্যতা হারানো নিকাশি খাল। বৃহস্পতিবার যে পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে এলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল পরিচালিত রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান, পেশায় চিকিৎসক পল্লব দাসের দাবি, এলাকার বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার রোগ ধরা গিয়েছে। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে নিকাশি পথের বাধা কোথায়, তা খুঁজে বার করেছেন তিনি। পল্লববাবু জানান, প্রায় ১০ মাস প্রশাসকের অধীনে থাকায় কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে এলাকায় বর্ষাকালীন প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পুরসভার তরফে নিকাশিপথ সংস্কার নিয়ে সেচমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজপুর-সোনারপুর পুর-এলাকায় দু’টি মূল নিকাশি পথ—খুড়িগাছি খাল এবং টালিনালা। তা ছাড়া, আদিগঙ্গা খালপথও রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী বিধি-নিষেধের কারণে এ বছর গ্রীষ্মে বর্ষাকালীন সংস্কারের কাজ হয়নি। ফলে বর্ষায় কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই জলমগ্ন গড়িয়া, নরেন্দ্রপুর, কামালগাজি, মিলনপল্লি, মিশনপল্লি-সহ ৩৫টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা। পুরসভার প্রায় ৫০ বর্গকিমি এলাকায় কোথাও হাঁটুজল, কোথাও কোমরজল। এ দিন পুর-চেয়ারম্যান পল্লববাবু, স্থানীয় বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম-সহ পুরসভা ও সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন টালি নালা ও খুড়িগাছি খালের পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন সেচমন্ত্রী। আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলাতে এ দিন রাজীববাবু বানভাসি এলাকায় অস্থায়ী ভাবে সেচ দফতরের শক্তিশালী পাম্প বসানোর ব্যবস্থা করেন। ইঞ্জিনিয়রদের নিকাশি খাল সাফাইয়েরও নির্দেশ দেন।
কী করে বন্ধ হয়ে গেল দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ নিকাশি খালপথ? পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল নিকাশি খালের উপর জবরদখল করে দোকান, বাড়ি তৈরি হয়েছে। কোথাও নিকাশি জলপথ আটকে চলছে মাছ চাষ। একাধিক পুর-ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, অবৈধ নির্মাণকাজের কথা শাসক দলের একাধিক নেতাকে জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি। খালপথের উপর অবৈধ দোতলা বাড়িও তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, নতুন পুরবোর্ড আসার পরেও বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় শাসক দলের কাউন্সিলরদের নিকাশি খালে মাছ চাষ বন্ধের অনুরোধ করা হয়েছিল। তাতেও কাজ হয়নি।
পুরসভা সূত্রে খবর, ওই পুর-এলাকার অধিকাংশ অঞ্চলের নিকাশি পথ হল খুড়িগাছি খাল। ওই খাল দিয়েই নিকাশি জল উত্তরভাগ পাম্পিং স্টেশনে পৌঁছয়। সেখান থেকে পাম্প চালিয়ে জল ফেলা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, অভ্যন্তরীণ নিকাশিপথ বন্ধ থাকায় ওই পাম্পিং স্টেশনে পর্যাপ্ত জল গিয়ে পড়ছে না। অন্য দিকে, গড়িয়া স্টেশনের কাছ থেকে টালিনালা সংস্কারের অভাবে মজে গিয়েছে। একইসঙ্গে ওই নালার নিকাশিপথও দখল হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এতে মদত দিচ্ছেন শাসকদলের স্থানীয় নেতারাই।
এ দিন খুড়িগাছি খাল পরিদর্শনের পরে রাজীববাবু অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও অবস্থাতেই নিকাশি খালের উপরে জবরদখল বরদাস্ত করা হবে না। আইনি পথে উচ্ছেদ-সহ কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ এক পুর-আধিকারিকের কথায়, ‘‘রোগ ধরা পড়েছে। ওষুধও নির্ণয় হয়েছে। এখন দেখা যাক, কতদিনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরে এলাকায়।’’