কলকাতায় এ বার কড়ি ফেললে শেষযাত্রাতেও মিলবে ‘বন্ধু’

বেঁচে থাকতে কারও বোঝা হননি তিনি। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁর মৃতদেহ যাতে কারও বোঝা না হয়, তা নিশ্চিত করে ফেলেছেন কসবার অসীমকুমার সান্যাল। ছেলে ও মেয়ে, দু’জনেই বিদেশে থাকেন। বাড়িতে তিনি আর স্ত্রী।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ১১:৩০
Share:

বেঁচে থাকতে কারও বোঝা হননি তিনি। তাই মৃত্যুর পরেও তাঁর মৃতদেহ যাতে কারও বোঝা না হয়, তা নিশ্চিত করে ফেলেছেন কসবার অসীমকুমার সান্যাল।

Advertisement

ছেলে ও মেয়ে, দু’জনেই বিদেশে থাকেন। বাড়িতে তিনি আর স্ত্রী। অসীমবাবুর কথায়, ‘‘দু’জনেরই বয়স হয়েছে। শরীর খারাপ হচ্ছে। এক জনের কিছু হয়ে গেলে অন্য জন দিশাহারা হয়ে যাবে। তাই আগে থেকে সব ঠিক করে রাখলাম। কারও কোনও ঝামেলা পোহাতে হবে না।’’

কী ভাবে? দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুর মতো কলকাতাতেও এখন এমন সংস্থা এসে গিয়েছে, যাদের কাছে নাম নথিভুক্ত করিয়ে রাখলেই মৃত্যুর পরে পারলৌকিক কাজকর্ম কেমন হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। এমনই একটি সংস্থার কাছে তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী পরিকল্পনার (প্রি-প্ল্যানিং অব আফটার লাইফ সার্ভিস) জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন অসীমবাবু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বেঁচে থাকতে কারও বোঝা হইনি। মরার পরেও কারও উপরে নির্ভর হয়ে তাঁদের বিড়ম্বনা বাড়াতে চাই না।’’

Advertisement

দেশপ্রিয় পার্কের বাসিন্দা এক প্রবীণ চিকিৎসক বাড়িতে একা থাকেন। একটি সংস্থায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন তিনিও। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এখন পরিবারের বৃত্ত ছোট হচ্ছে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ কমছে। কিছু একটা হলে দায়িত্ব নেওয়ার বদলে সবাই ঠেলাঠেলি করে। মৃত্যুর পরে সেই অপমানটা চাই না।’’

কী কী কাজ করে ওই সব সংস্থা?

তাঁদের কাছে কত নাম নথিভুক্ত হয়েছে, খাতা খুলে তা দেখিয়ে এমনই এক সংস্থার কর্তা বললেন, ‘‘শেষযাত্রার গাড়ি কী রকম হবে, কোন ফুল দিয়ে সাজানো হবে, কোথায় তাঁকে দাহ বা কবর দেওয়া হবে, দাহ করা হলে কাঠে হবে নাকি চুল্লিতে, অস্থি কী ভাবে কোথায় বিসর্জন দেওয়া পছন্দ করবেন, শ্রাদ্ধের দিন কারা নিমন্ত্রিত থাকবেন, কী কী পদ হবে— সব ঠিক থাকবে আগে থেকেই।’’

শুধু তা-ই নয়, কোন পুরোহিত বা যাজক আসবেন, শ্রাদ্ধ না স্মরণসভা হবে— সবই উইল করে রাখা যাবে ওই সংস্থার কাছে। কিন্তু চুক্তিমাফিক সব কিছু চলছে কি না, তা কে দেখবে? এক সংস্থার কর্তা বললেন, ‘‘কেউ নিজের জন্য উকিল ঠিক করে যান, কেউ কোনও আত্মীয়ের নাম-ঠিকানা দিয়ে যান। ওই ব্যক্তিদের সম্মতি নিয়ে আইনজীবীর উপস্থিতিতে সইসাবুদ করে নাম নথিভুক্ত করানো হয়।’’

একটি সংস্থার কর্ণধার শ্রুতি রেড্ডি শেঠি কসবায় তাঁদের অফিসে বসে বললেন, ‘‘পাঁচ হাজার টাকা থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত তিনটি প্যাকেজ রয়েছে আমাদের। ইতিমধ্যে আট জন আমাদের কাছে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।’’ শ্রুতির কথায়, ‘‘এক জন চেয়েছেন, তাঁর শ্রাদ্ধে যেন গরিবদের খাওয়ানো হয়। আর এক জনের ইচ্ছা, তাঁর চিতাভস্ম যেন তাঁর প্রিয় বাগানে ছড়ানো হয়।’’

মৃত্যুর পরেও কারও বোঝা না হয়ে থাকার ওই ইচ্ছাগুলিকে অসম্মান করতে চান না শ্রুতিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন