পুজোর থিমেই ট্যাবলো সাজবে বিসর্জন-মিছিলে

মণ্ডপে লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখার পরে লাইন দিয়ে ঠাকুর আসবে দর্শকদের সামনে! শহরের বিসর্জনে এ বার এটাই নতুন ‘থিম’। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় শোভাযাত্রা করে বিসর্জনের রেওয়াজ বহু দিনের। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে এ শহরেও তেমনই শোভাযাত্রার আয়োজন করছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০১
Share:

শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। শনিবার, রেড রোডে। ছবি:দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

মণ্ডপে লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখার পরে লাইন দিয়ে ঠাকুর আসবে দর্শকদের সামনে!

Advertisement

শহরের বিসর্জনে এ বার এটাই নতুন ‘থিম’।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় শোভাযাত্রা করে বিসর্জনের রেওয়াজ বহু দিনের। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে এ শহরেও তেমনই শোভাযাত্রার আয়োজন করছে রাজ্য সরকার। দর্শকদের জন্য দু’পাশে তৈরি হচ্ছে কাঠের গ্যালারিও।

Advertisement

লালবাজার জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার বিসর্জনের শেষ দিন অন্তত ২৭টি পুজো কমিটিকে বিকেলের মধ্যে খিদিরপুর রোডে হাজির হতে বলা হবে। তার মধ্যে ‘সেরার সেরা’ ১৫টি পুজো, ‘সেরা মণ্ডপ’ তিনটি, ‘সেরা প্রতিমা’ চারটি, ‘সেরা আলোকসজ্জা’ পাঁচটি পুজো থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে শোভাযাত্রায় পুজোর সংখ্যা বাড়বে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে পুজো কমিটির লোকজন খিদিরপুর রোডে হাজির হবেন। সেখানে প্রতিটি পুজো সর্বোচ্চ চারটি ট্যাবলো সাজাতে পারবে। পরে ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে থেকে রেড রোড ধরে পুলিশ মেমোরিয়াল পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে। তার পরে বাজে কদমতলা, দইঘাট বা বাবুঘাটে বিসর্জন দেওয়া যাবে। উত্তর কলকাতার পুজোগুলি নিমতলা ঘাটেও বিসর্জন দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের নিজ উদ্যোগে শোভাযাত্রা করে যেতে হবে।

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো নিরাপত্তার কড়াকড়ি করা হবে। ফলে পুজো কমিটিগুলি নিজেদের প্রতিমা নিয়ে ওই এলাকায় পৌঁছলে বন্ধ করে দেওয়া হবে রেড রোড সংলগ্ন সব রাস্তা। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বাধীনতা বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। তাই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।’’

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য রেড রোড ও তার আশপাশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশ, স্পেশ্যাল ফোর্স ও কম্যান্ডো বাহিনী মিলিয়ে হাজারখানেক নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন। থাকবে নজরমিনার এবং সিসিটিভি-র নজরদারিও। নির্দিষ্ট নিমন্ত্রণপত্র ছাড়া ওই শোভাযাত্রা দেখা যাবে না বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

বস্তুত, গত বছর পুজোর পরেই মুখ্যমন্ত্রী এমন শোভাযাত্রার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু হাতে সময় কম থাকায় শেষমেশ সেই আয়োজন করে ওঠা যায়নি। তাই, এ বছর যে শোভাযাত্রার আয়োজন করতেই হবে, তা আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিসর্জনের পরিকল্পনাও করা হয়েছিল সেই মতো। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার, দশমীর বিকেল পর্যন্ত বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যাবে। বুধবার মহরমের জন্য বিসর্জনে নিষেধা়জ্ঞা রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ফের বিসর্জন শুরু হবে। শোভাযাত্রায় নির্বাচিত পুজোগুলিকে বিসর্জনের জন্য শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কী ভাবে ট্যাবলো সাজাবে পুজো কমিটিগুলি?

বিভিন্ন পুজো কমিটি সূত্রের খবর, মণ্ডপের থিমই ছোট আকারে রাখা হতে পারে ট্যাবলোয়। মণ্ডপের কোনও ‘ইনস্টলেশন’ এনেও সাজানো হতে পারে। থাকতে পারে আলোকসজ্জার অংশবিশেষও।

লালবাজার জানিয়েছে, গঙ্গার ২৪টি ঘাটে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট ১০ জন ডিসি ওই ২৪টি ঘাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। প্রতিটি ঘাটেই নজরমিনার তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশকর্মীরা বিসর্জনে চোখ রাখবেন। এ ছাড়া, গঙ্গার প্রতিটি ঘাটে কয়েক হাজার পুলিশকর্মী থাকবেন। যুগ্ম কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনার পদের অফিসারেরাও সে দিন পথে নামবেন। বিসর্জন চলাকালীন তিন দিন গঙ্গায় রিভার ট্রাফিকের পাঁচটি লঞ্চ টহল দেবে। এ ছাড়াও, জীবনদায়ী (লাইফ সাপোর্ট) ব্যবস্থা নিয়ে লঞ্চে উপস্থিত থাকবেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানেরা।

এই শোভাযাত্রা ঘিরে অবশ্য শুক্রবার শহরে যানজটের আশঙ্কা করছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, খাস শহরের পুজোগুলির বাইরে লেকটাউন, দমদম পার্ক, বেহালা, ঠাকুরপুকুর এলাকা থেকেও ক্লাবগুলি শোভাযাত্রায় আসবে। তাদের কেউ কেউ ফিরে গিয়ে চিরাচরিত ঘাটে বিসর্জন দিতে পারে। ফলে দুপুর থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় যানজট শুরু হবে। সন্ধ্যাতেও তা থাকবে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু সাধারণ পুজোরও সে দিন বিসর্জন হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, রেড রোড ওই দিন বন্ধ থাকবে বলে বেহালা বা খিদিরপুর রোড দিয়ে আসা যানবাহনকে জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে ধর্মতলা হয়ে ডালহৌসি পৌঁছতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement