রিপোর্ট মেয়রকে

প্রেসিডেন্সির গেট ভাঙতে লঙ্ঘিত হেরিটেজ-বিধি

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের মূল ফটক ভাঙা নিয়ে প্রশ্নের মুখে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা। ১৮৭৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অল্প দিন পরেই তৈরি হয় ওই গেট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৫
Share:

গেট ভাঙার পরে প্রেসিডেন্সির প্রবেশপথ। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের মূল ফটক ভাঙা নিয়ে প্রশ্নের মুখে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা। ১৮৭৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অল্প দিন পরেই তৈরি হয় ওই গেট। গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে গেটটিও তাই গুরুত্বপূর্ণ হেরিটেজ হিসেবে গণ্য। পুরসভার হেরিটেজ কমিটির কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে যান। যে ভাবে গেটটি ভাঙা হয়েছে, তাতে তাঁরা অসন্তুষ্ট। সে কথা জানিয়ে ওই দিনই তাঁরা মেয়রকে রিপোর্টও দেন। তাঁদের অভিযোগ, এই ধরনের হেরিটেজ ভবনে এমন সংস্কার করতে হেরিটেজ কমিশনের আগাম অনুমতি প্রয়োজন। প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ তা নিয়েছিলেন, এমন খবরও তাঁদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন কমিটির এক আধিকারিক।

Advertisement

শুক্রবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টি থেকে ‘নিরাপদ’ দূরত্বে থাকারই চেষ্টা করেছেন। প্রেসিডেন্সির মূল ফটক এ ভাবে ভাঙা ঠিক হয়েছে কি না, তা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করে বিষয়টির দায় তিনি চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপরেই। শোভনবাবুর কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্সি স্বয়ংশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। ওঁরা নিশ্চয়ই হেরিটেজের সংস্কৃতি মেনেই যা করার করবেন।’’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কারের যুক্তিতে গত বুধবার ঐতিহ্যবাহী মূল ফটকটি পে-লোডার দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। তা নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার পরিদর্শনে গিয়েছিল হেরিটেজ কমিটির দলটি। অভিযোগ, প্রথমে তাঁদের ঢুকতেই দেননি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। পরে পুরসভা থেকে ফোনাফুনি করে তাঁদের ভিতরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়। হেরিটেজ কমিটির এক কর্তা জানান, রেকর্ড থেকে দেখা গিয়েছে প্রেসিডেন্সির ভবনটি পুরোপুরি এ গ্রেডের হেরিটেজ। মূল ফটকটিও একই মর্যাদার ভাগীদার। তাই ওই ভবনের সামান্যতম সংস্কার করতে হলেও হেরিটেজ কমিশনের অনুমতি দরকার। কিন্তু অনুমতির কোনও নথি প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ তাঁদের দেখাননি বলে জানান হেরিটেজ কমিটির আধিকারিকেরা। পুর-প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টেও তা উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

হেরিটেজ কমিটির ওই রিপোর্ট পুরকর্তাদের নজরেও এসেছে। এ দিন মেয়র বিষয়টির দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে— তবে কি পুরনো গেট ফিরিয়ে আনা হবে? শোভনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ওই গেটটাই ফিরিয়ে আনতে হবে, তেমন কোনও কথা নেই। হেরিটেজ সংস্কৃতি মেনে ওঁরা কিছু করতেই পারেন।’’ যদিও পুরসভার এক আমলার কথায়, অতীতে একাধিক ক্ষেত্রে গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ বিল্ডিংয়ে হাত দেওয়া নিয়ে কড়া ভূমিকা ছিল পুরসভার। সদ্য রাজভবনের পাশে এক হেরিটেজ ভবনে এক সংস্থার আলো লাগানো নিয়েও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মেয়র। ২৪ ঘণ্টার নোটিসে সেই আলো সরাতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে।

তবে মেয়র যা-ই বলুন না কেন, গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ মর্যাদার ওই ভবনের মূল প্রবেশদ্বার ভাঙা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে নানা মহলে। রাজনৈতিক দল থেকে শিক্ষাবিদেরা, সকলেই তাতে সামিল। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু ইতিহাসের সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী ওই ফটক। তা ভেঙে দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ এ প্রসঙ্গে পুরনো এক ঘটনার কথা তুলে তিনি বলেন, ‘‘সাইমন কমিশন যখন ভারতে আসে, সে সময়ে ওই গেট থেকেই গো-ব্যাক সাইমন ধ্বনি তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সির পডুয়ারা। এত কাল ধরে ওই ফটক দিয়েই নির্বিঘ্নে চলাচল হয়েছে। এখন হঠাৎ কারও নির্দেশে ওই গেট বদলানোর কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’’

এ দিন কিছুক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কলেজ স্ট্রিট অবরোধ করে এসএফআই। পরে দলমত নির্বিশেষে পড়ুয়ারা মিছিলও করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের গায়ে লাগানো টাইলসে সেঁটে দেওয়া হয় পোস্টার। পড়ুয়াদের দাবি— যে ভাবে সংস্কারের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।

এ দিন বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘যা বলার উপাচার্য বলবেন। এ বিষয়ে নিশ্চয়ই জবাব আছে।’’ উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জবাব মেলেনি মেসেজেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন