অনুশীলনও বন্ধ কলেজ স্কোয়ারে, বিপাকে বহু খেলোয়াড়

প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভা এত দিন কী করছিল? একটি প্রাণ চলে যাওয়ার পরে তবে তাদের টনক নড়ল?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৫
Share:

স্তব্ধ: তালাবন্ধ কলেজ স্কোয়ারের পুল। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কলেজ স্কোয়ারের পুলে এক কিশোরের ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনার জেরে আগামী সাত দিন সেখানকার সমস্ত ক্লাবে সাঁতার প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল কলকাতা পুরসভা। সাত দিন পরে ক্লাবগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হবে। তার পরেই ঠিক হবে, তাদের আদৌ সাঁতার প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে কি না। সোমবার পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান)

Advertisement

দেবাশিস কুমারের সঙ্গে কলেজ স্কোয়ারের বিভিন্ন ক্লাবকর্তার বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু। তবে প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভা এত দিন কী করছিল? একটি প্রাণ চলে যাওয়ার পরে তবে তাদের টনক নড়ল?

এ দিন কলেজ স্কোয়ারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি পুলেই সাঁতার প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। কলেজ স্কোয়ার সুইমিং ক্লাবে গিয়ে দেখা গেল, পুরসভার নিষেধাজ্ঞার জেরে ওয়াটার পোলো দলের সদস্যেরাও জলে নামতে পারেননি। ওই দলের প্রশিক্ষক রাজীব বৈদ্য বলেন, ‘‘সামনেই ওয়াটার পোলো টুর্নামেন্ট। জলে নেমে অনুশীলন করা খুব জরুরি ছিল।’’ সন্তোষকুমার দাস নামে ক্লাবের এক কর্তা বলেন, ‘‘অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সাঁতার প্রতিযোগিতা ও ওয়াটার পোলো টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা। অনুশীলন করতে না পারলে তো খুব মুশকিল।’’ ওই ক্লাবেরই আর এক কর্তা বললেন, ‘‘জাতীয় স্তরের বহু ওয়াটার পোলো খেলোয়াড় ও সাঁতারু এখানে অনুশীলন করেন। ওঁদের অনুশীলন বন্ধ করার কি কোনও দরকার ছিল? সাত দিন পরে কী সিদ্ধান্ত হয়, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’’

Advertisement

জলে নামতে পারেননি ওয়াটার পোলো দলের সদস্যেরা। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কলেজ স্কোয়ারের আর একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাব ‘বৌবাজার ব্যায়াম সমিতি’র সদস্যদের মতে, সাঁতারের অনুশীলন বন্ধ করে দেওয়াটা কোনও সমাধান নয়। জয়ন্ত দত্ত নামে ক্লাবের এক সদস্য বললেন, ‘‘সাঁতারুরা সারা বছরই অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কারণ, এই দুই মাসেই বড় বড় সব সাঁতার প্রতিযোগিতা হয়।’’ ওই ক্লাবের এক প্রশিক্ষক জানান, এর আগে ২০১৭ সালে কলেজ স্কোয়ারে যখন সাঁতার প্রশিক্ষক কাজল দত্ত ডুবে মারা গিয়েছিলেন, তখনও গোটা মরসুমের জন্য সাঁতার বন্ধ করে দিয়েছিল পুরসভা। ফলে কোনও টুর্নামেন্ট হয়নি। সেই কারণে সে বার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাংলার সাঁতারুদের ফল খারাপ হয়েছিল। অনেকে টুর্নামেন্টে যেতেই পারেননি।

এ দিন কলেজ স্কোয়ারের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকলেও শহরের অন্য কয়েকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র অবশ্য খোলা ছিল। হেদুয়ায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষ সাঁতারুদের অনুশীলন চলছে। আজ, মঙ্গলবার কলকাতার বাকি সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাবগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসবে পুরসভা।

রবিবার যে ক্লাবের অধীনে সাঁতার শিখতে গিয়ে মহম্মদ শাহবাজ নামে এক কিশোর মারা যায়, সেই ‘দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট সুইমিং ক্লাব’ চলতি মরসুমের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নবীন শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখাতে পারবে না বলে নির্দেশ নিয়েছে পুরসভা। সেই সঙ্গে পুরসভা জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিটি সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাবকে নবীনদের জন্য আলাদা করে অগভীর পুল তৈরি করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন