SSKM Hospital

প্রভাবশালী-বিতর্ক ফের সামনে, ‘ক্ষুণ্ণ’ পিজি-র ডাক্তারেরা

গ্রেফতার হওয়া প্রভাবশালীরা জেলে না কাটিয়ে বেশির ভাগ সময় থাকছেন ওই হাসপাতালে এবং তাঁদের ‘আড়াল করতে’ দিনের পর দিন গুরুতর অসুস্থ বলা হচ্ছে— এসএসকেএমের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৮
Share:

এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

‘প্রভাবশালী’ বিতর্কে বিদ্ধ পূর্ব ভারতে চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র এসএসকেএম!

Advertisement

গ্রেফতার হওয়া প্রভাবশালীরা জেলে না কাটিয়ে বেশির ভাগ সময় থাকছেন ওই হাসপাতালে এবং তাঁদের ‘আড়াল করতে’ দিনের পর দিন গুরুতর অসুস্থ বলা হচ্ছে— এসএসকেএমের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সাম্প্রতিক কালে আদালতের পর্যবেক্ষণেও এমন বিষয় উঠে আসছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চও এমনই একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই হাসপাতালে ভর্তি প্রভাবশালীদের সম্পর্কে রিপোর্ট তলব করেছে। প্রশ্ন তুলেছে হাসপাতালের ভূমিকা নিয়েও।

আর তাতেই ‘ক্ষুণ্ণ’ পিজি-র চিকিৎসকদের একাংশ। ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, উলুখাগড়ার প্রাণ যাচ্ছে’— এই প্রবাদ মনে করিয়ে তাঁরা বলছেন, ‘‘বার বার কেন আমাদেরই এই অপবাদের ভাগীদার হতে হবে? এর থেকে মুক্তি কবে?’’ তাঁদের মতে, কোনও রোগী কোথায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেবেন, সেটা তাঁরা স্থির করেন না। কোনও ‘প্রভাবশালী’কেই তাঁরা ডেকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেননি। কিন্তু তার পরেও তাঁদেরই নিশানা করা হচ্ছে। সেই টানাপড়েনে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার।

Advertisement

এসএসকেএম যে কোনও ভাবেই ‘প্রভাবশালীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল’-এর মতো অপবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না, তা অবশ্য স্পষ্ট। অতীতে সেখানে ভর্তি থাকা আরাবুল ইসলাম, বিকাশ মিশ্র, মদন মিত্র, অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’— সব ক্ষেত্রেই একই অভিযোগের আঙুল উঠেছে এসএসকেএমের দিকে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে সুজয়কৃষ্ণকে ঘিরে। যা দেখে চিকিৎসকদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘কখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, কখনও আদালত— বার বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিজন, পরিচিতদের কাছেও জবাবদিহি করতে হচ্ছে। এতে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে।’’ বৃহত্তর রোগীদের স্বার্থে যা ক্ষতিকর বলেই মত চিকিৎসক মহলের। প্রাক্তন এক অভিজ্ঞ সরকারি চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের কাছে সব রোগীই সমান। কিন্তু সমাজে যদি আমাদের প্রতিষ্ঠান, আমাদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে, তা হলে মানসিক অবস্থা কী ভাবে ঠিক থাকবে?’’ এর ফলে মন দিয়ে অন্য রোগীর চিকিৎসাতেও বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে দাবি চিকিৎসকদের একাংশের।

সম্প্রতি সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়ে ফের বিতর্কে জড়িয়েছে এসএসকেএম। প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে ভর্তি ওই রোগীকে বার বারই ‘গুরুতর অসুস্থ’ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল। যদিও গত বুধবার বিচারপতি অমৃতা সিংহের নির্দেশের পরে এসএসকেএম থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে জোকা ইএসআই হাসপাতালে গিয়ে কণ্ঠস্বরের নমুনা দিয়ে এসেছেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, এত দিন কেন সেটা করানোর ব্যবস্থা করেনি এসএসকেএম? এখানেও ‘আপত্তি’ হাসপাতালের আধিকারিক থেকে চিকিৎসকদের একাংশের। তাঁদের দাবি, সুজয়কৃষ্ণকে এসএসকেএমে ভর্তির সিদ্ধান্ত জেল কর্তৃপক্ষের। বার বার তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কখনওই অন্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞেরা তা পরীক্ষা করে তাঁকে ছুটি দেওয়ার সুপারিশ করেননি।

এসএসকেএমের চিকিৎসকদের একাংশ এ-ও বলছেন, ‘‘উনি সুস্থ থাকলে বুধবার যখন হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হল, তখন তো আর এখানে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজন ছিল না।’’ একান্ত আলোচনায় তাঁরা এ-ও বলছেন যে, দীর্ঘ দিন ধরে কোনও রোগী এক হাসপাতালে থেকেও সুস্থ না হলে পরিজনেরা তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যান। এখানে সুজয়কৃষ্ণের দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের। এত দিন এসএসকেএমে থেকেও তিনি যখন সুস্থ হচ্ছেন না, তখন তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না কেন? তার বদলে ‘রাজনৈতিক দলের অনুগত’— এই অপবাদ নিয়ে তাঁদের কেন চলতে হবে, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন চিকিৎসকেরা।

এসএসকেএমের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘রোগী ভর্তি হলে তাঁর চিকিৎসা করতেই হবে। তিনি যিনিই হোন না কেন। তবে কোনও রোগী যদি দীর্ঘ দিন ভর্তি থাকেন এবং তাঁর অসুস্থতার নিরিখে তত দিন রাখার প্রয়োজন রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন যদি ওঠে— তা হলে তো ডাক্তারকে জবাবদিহি করতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন