হাইকোর্টে হচ্ছে বহুতল, ভাঙতে জনস্বার্থ মামলা

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, যুক্তি-বিরুদ্ধ যুক্তি চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। কলকাতা হাইকোর্টের মধ্যে নির্মীয়মাণ বহুতল ভাঙার আর্জি জানিয়ে এ বার জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হল। শুক্রবার ওই মামলা দায়ের করেছেন মন্টুরঞ্জন দাস। তাঁর আইনজীবী চিত্তরঞ্জন পণ্ডা জানান, কলকাতা পুরসভা এলাকায় ঐতিহ্যশালী ভবনগুলির (হেরিটেজ বিল্ডিং) রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে যে আইন রয়েছে, সেই আইন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে হাইকোর্টের ভিতরে তৈরি হচ্ছে ওই বহুতল।

Advertisement

শমীক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, যুক্তি-বিরুদ্ধ যুক্তি চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। কলকাতা হাইকোর্টের মধ্যে নির্মীয়মাণ বহুতল ভাঙার আর্জি জানিয়ে এ বার জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হল।

Advertisement

শুক্রবার ওই মামলা দায়ের করেছেন মন্টুরঞ্জন দাস। তাঁর আইনজীবী চিত্তরঞ্জন পণ্ডা জানান, কলকাতা পুরসভা এলাকায় ঐতিহ্যশালী ভবনগুলির (হেরিটেজ বিল্ডিং) রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে যে আইন রয়েছে, সেই আইন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে হাইকোর্টের ভিতরে তৈরি হচ্ছে ওই বহুতল। সেই জন্যই ওই বেআইনি নির্মাণ অবিলম্বে ভাঙার নির্দেশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে মামলায়।

এখন কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার বিচার হয় প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির আদালতে। হাইকোর্টের একটি সূত্রের খবর, ওই ডিভিশন বেঞ্চে আগামী শুক্রবার এই মামলার শুনানি হতে পারে।

Advertisement

হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশ জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে রাজ্য পূর্ত দফতরের তত্ত্বাবধানে ওই বহুতল তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তিনটি তলা নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কয়েকটি তলা উঠবে বলে পূর্ত দফতরের একটি সূত্রের খবর। পূর্ত দফতরের বক্তব্য, প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই তারা বহুতল নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু হাইকোর্টের একটি সূত্র ও আইনজীবীদের একাংশের দাবি, এই ব্যাপারে কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি।

কলকাতা হাইকোর্টের মতো ঐতিহ্যবাহী ভবনের ভিতরে ওই নির্মাণ নিয়ে বিচারপতিদের কয়েক জন ঘনিষ্ঠ মহলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে হাইকোর্টের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। আইনজীবীদের একটা বড় অংশও অসন্তুষ্ট। ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের বাগানে পুষ্প প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, “ওই বহুতল তৈরির কাজ শুরুর আগে তাঁকে ভুল বোঝানো হয়েছিল।” এক প্রবীণ আইনজীবীর বক্তব্য, “পূর্ত দফতরের কর্তারা বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরা হাইকোর্টের বাগানকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু তা তো করা হয়নি, উল্টে বাগানের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।”

আইনজীবীদের অনেকেরই বক্তব্য, হাইকোর্টের ভিতরে হাওয়ার স্বচ্ছন্দ চলাচলের জন্য যে পরিমাণ জায়গা থাকা দরকার, নির্মীয়মাণ বহুতল সেই জায়গার বেশ কিছুটা ঢেকে দিয়েছে। তাঁদের মতে, ১৮৬২ সালে হাইকোর্টের মতো ঐতিহ্যশালী ভবন এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে হাওয়া-বাতাস অবাধে খেলতে পারে এবং পরিবেশ আরামদায়ক থাকে। তা ছাড়া, কলকাতা হাইকোর্টের মতো প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী ভবনের মধ্যে কোনও অবস্থাতেই ওই ধরনের বহুতল নির্মাণ হতে দেওয়া যেতে পারে না বলেও ওই আইনজীবীরা মনে করেন।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বহুতলে রাজ্য পূর্ত দফতরের অফিস হবে। হাইকোর্টের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পূর্ত দফতরের কয়েকটি অফিস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। বহুতলটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে ওই সব অফিস এক ছাদের তলায় আনা হবে।

জনস্বার্থ মামলার বিষয়টি নিয়ে শনিবার পূর্ত দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “মামলার কাগজ এখনও আমাদের কাছে আসেনি। তবে বিষয়টি শুনেছি। বহুতল নির্মাণের অনুমতি কিন্তু আমাদের কাছে রয়েছে। ওই অনুমতি পাওয়ার পরেই আমরা বহুতল নির্মাণ শুরু করি।” তিনি জানান, বহুতলে বাতানুকূল যন্ত্রের প্ল্যান্ট বসানো হবে, অন্যান্য অফিসও থাকবে।

হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রের খবর, প্রধান বিচারপতি পদে যখন অরুণ মিশ্র ছিলেন, তখন বহুতল নির্মাণের বিষয়টি তাঁর নজরে আনা হয়েছিল। কিন্তু নজরে আনার অর্থ অনুমতি পাওয়া নয়।

আইনজীবী চিত্তরঞ্জনবাবু জানান, জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা পুরসভা, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য হেরিটেজ কমিশন, রাজ্য সরকার ও পূর্ত দফতরকেও যুক্ত করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন