বৃষ্টি থামতেই শহর ছুটল শেষবেলার পুজোর বাজারে

প্রকৃতি বনাম পাঁজির লড়াইয়ে কে জিতবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু বাঙালি যে উৎসবের সঙ্গেই, তা বুঝিয়ে দিল রবিবারের কলকাতা। বেলা গড়াতেই লাগাম পড়ল বৃষ্টিতে। সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুজোর বাজারে নেমে পড়লেন শহরবাসী। বঙ্গোপসাগর থেকে স্থলভূমিতে ঢুকে আসা নিম্নচাপের জেরে শনিবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল মহানগরে। মাথায় হাত পড়েছিল বিক্রেতা থেকে পুজো উদ্যোক্তাদের। সপ্তাহান্তের বাজারেও সে ভাবে ভিড় জমেনি। রবিবারও সকালটা শুরু হয় বৃষ্টি দিয়েই।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪১
Share:

প্রকৃতি বনাম পাঁজির লড়াইয়ে কে জিতবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু বাঙালি যে উৎসবের সঙ্গেই, তা বুঝিয়ে দিল রবিবারের কলকাতা। বেলা গড়াতেই লাগাম পড়ল বৃষ্টিতে। সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুজোর বাজারে নেমে পড়লেন শহরবাসী।

Advertisement

বঙ্গোপসাগর থেকে স্থলভূমিতে ঢুকে আসা নিম্নচাপের জেরে শনিবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল মহানগরে। মাথায় হাত পড়েছিল বিক্রেতা থেকে পুজো উদ্যোক্তাদের। সপ্তাহান্তের বাজারেও সে ভাবে ভিড় জমেনি। রবিবারও সকালটা শুরু হয় বৃষ্টি দিয়েই। ভরদুপুরে হাতিবাগান থেকে গড়িয়াহাটসর্বত্রই রাস্তা ছিল ফাঁকা।

পুজোর আগে ক্যালেন্ডারে আরও একটা রবিবার মিলবে। কিন্তু কেনাকাটার হিসেবে এটাই পুজোর আগে শেষ রবিবার বলা চলে। সেই হিসেবে এ দিনই ছিল পুজোর বিকিকিনির ফাইনাল ম্যাচ। সেই ম্যাচের শুরুতেই বৃষ্টির এমন দাপট দেখে কার্যত মাথায় দিয়ে বসেন দোকানিরা। তবে পাঁজির সঙ্গে লড়াইয়ে প্রকৃতি এতটা নির্দয় হয়নি। বেলা গড়াতেই বৃষ্টি কমে। আকাশের মুখ ভার সত্ত্বেও বাজারে ভিড় জমাতে শুরু করেন লোকজন।

Advertisement

বিকেল সাড়ে তিনটের হাতিবাগান। ফুটপাথে ঠাসাঠাসি ভিড় না হলেও লোকজন ভালই জমেছে। ফুটপাথ হোক বা বড় দোকান, দলে দলে লোক ঢুকেছেন। তবে আকাশের মেজাজ ভাল না দেখে তড়িঘড়ি কেনাকাটা সেরে বাড়ির পথ ধরতে চেয়েছেন অনেকেই। বিকেল চারটে নাগাদ হাতিবাগানের মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই তরুণী। আকাশের হাল দেখে এক জন বলেই ফেললেন, “যা অবস্থা, ফের বোধহয় বৃষ্টি নামবে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতেই হবে।”

বেলা বাড়তেই ভিড় জমেছে গড়িয়াহাট-নিউ মার্কেটেও। বিকেল সাড়ে চারটেয় ধর্মতলা চত্বর, লিন্ডসে স্ট্রিটে উপচে পড়া অবস্থা। সকালে বৃষ্টি দেখে মালপত্রের অনেকটাই বস্তাবন্দি করে রেখেছিলেন দোকানিরা। ভিড় বাড়ছে দেখে তড়িঘড়ি নতুন করে দোকান সাজাতে শুরু করলেন সকলেই। এতক্ষণ মুষড়ে থাকা বড় বড় দোকানের কর্মীরাও ফের চনমনে মেজাজে।

আবহবিদেরা অনেকেই বলছেন, খাতায়-কলমে পুজো এ বার বর্ষাকালের মধ্যেই পড়েছে। তাই আচমকা তৈরি হওয়া এমন নিম্নচাপের বৃষ্টিও অস্বাভাবিক কিছু নয়। পুজোতেও বৃষ্টি হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা সর্বত্র। তবে অতীতে দেখা গিয়েছে, পুজোয় বৃষ্টিও উৎসবমুখর বাঙালিকে দমাতে পারেনি। বছর কয়েক আগে পুজোয় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। অষ্টমীর সারা দিন বৃষ্টির পরে সন্ধ্যায় কমেছিল দাপট। কাদা-জল মাড়িয়ে সেই সন্ধ্যাতেই ভিড় উপচে পড়ে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে।

গত বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ঘূর্ণিঝড় পিলিনের দাপটে অষ্টমীর সন্ধ্যা থেকেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। সেই সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পথে নেমেছিল কলকাতা। শহরের এক পুজোকর্তার বক্তব্য, “বৃষ্টি হলে আমরা চিন্তায় থাকি। কিন্তু বহু বার দেখেছি, বৃষ্টিকে হারিয়ে জিতে গিয়েছে বাঙালি।”

এ দিন বিকেলে অবশ্য আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা সুখবর শুনিয়েছে হাওয়া অফিস। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, আজ, সোমবার বিকেল থেকেই দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। মহালয়ায় কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও বাকি দক্ষিণবঙ্গে পরিস্থিতি ভাল হবে।

কিন্তু সেই ভাল পরিস্থিতি কি পুজো পর্যন্ত চলবে?

এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শহর জুড়ে। আলিপুর হাওয়া অফিসের অন্দরেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন