শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীনাথ বহুরূপীকে মনে আছে?
আধো অন্ধকারে হঠাৎ বারান্দায় লাফ দিয়ে পড়ল বাঘ। মেজদা তখন তাঁর ভাইদের নিয়ে পিলসুজ জ্বেলে পড়তে বসেছেন। আর বাঘ লাফিয়ে পড়তেই মেজদা পিলসুজ উল্টে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সড়কি লাও, বন্দুক লাও— আওয়াজ উঠল।
পশ্চিমি দারোয়ান বন্দুক তাক করতেই সেই বাঘ মানুষের গলায় কেঁদে উঠল, ‘‘আমি বাঘ নই। ছিনাথ (শ্রীনাথ) বহুরূপী।’’
সেই বহুরূপীদের জীবন-কাহিনি নিয়েই এ বার থিম গড়েছেন শিল্পী-দম্পতি শুভদীপ ও সুমি মজুমদার। দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোর জন্য। যে ভাবে এক জন মানুষ নিমেষে বাঘ, সিংহ, ভালুকের ছদ্মবেশে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে পারেন, সেটাই একটা বিবর্তন। আবার যে সব মানুষেরা বহুরূপী সেজে মানুষকে আনন্দ দেন, তাঁদের জীবন নাট্যের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে, হয়তো ওঁদের অনেকের বাড়িতে রোজ উনুনই জ্বলে না। নিজের দুঃখ চেপে রেখে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার এই যে মানসিকতা, বিবর্তন সেটাও।
বহুরূপীদের জীবনযাত্রার সেই অজানা কথাই এ বার মণ্ডপের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন ওই শিল্পী দম্পতি। বহুরূপীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কয়েক বছর আগে একটি সিনেমাও হয়েছিল। সেখানে শ্রীনাথ বহুরূপীর মতোই বাঘের সাজে পাড়ায় পাড়ায় খেলা দেখাত বাঘ বাহাদুর। সুমি বলছেন, ‘‘আমরা সবাই পুজোয় আনন্দ করি। কিন্তু বহুরূপীদের বাড়ির ছেলে-বউরা ওই চারটে দিন বিভিন্ন মণ্ডপে খেলা দেখিয়ে বেড়ান। কারণ, সারা বছরের আয়ে তাঁদের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না।’’
যাঁরা পাড়ায় পাড়ায় শিব, কালী, কৃষ্ণ সেজে আনন্দ দেন, তাঁরা কিন্তু শুধু রাস্তা দিয়ে হেঁটেই বেড়ান না। মুখে মুখে ছড়াও কাটেন। তাতে নির্দিষ্ট বক্তব্যও লুকিয়ে থাকে। সেই ছড়াকেই এ বার আবহসঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন সুমি-শুভজিৎ।