মার্চে ট্যাংরায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এক যুবকের দু’টি পা কেটে তাঁকে রেল লাইনের ধারে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনার পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল যুবকের পরিবার। বুধবার, সেই মামলার দ্বিতীয় শুনানির দিন পুলিশি তদন্ত-রিপোর্টে একাধিক গাফিলতি দেখে হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মন্তব্য করেন, ঘটনার তদন্তভার কেন সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা দিক রাজ্য। পাশাপাশি এ দিন শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, ওই যুবকের দু’টি পা যে ট্রেনেই কাটা পড়েছে, সে বিষয়ে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুলিশ কেন রেল কর্তৃপক্ষ বা রেল পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, এ দিন সেই প্রশ্নও তুলেছে হাইকোর্ট।
ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ জানায়, ১২ মার্চ রাতে রাহুল রায় নামে ওই যুবককে শিয়ালদহ ১ নম্বর রেল সেতু থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর দু’টি পা-ই কাটা ছিল। অস্ত্রোপচারের পরে ৯ এপ্রিল এনআরএস থেকে ছাড়া পান রাহুল।
পুলিশ জানায়, ১৩ মার্চ শিয়ালদহ রেল পুলিশ থানায় এফআইআর করেন রাহুলের দাদা গঙ্গা। রেল পুলিশ এফআইআর পাঠায় ট্যাংরা থানায়। সেখানে অভিযোগ দায়ের হয় স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম, রানা মুকেশ, শ্রীকান্ত, মনোজ, অজয়-সহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রেফতার হয় শুধু অজয়।
এর পরেই ঘটনার সিআইডি তদন্ত ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিচারপতি দত্তের আদালতে মামলা করেন গঙ্গা। তাঁর আইনজীবী সোমপ্রিয় চৌধুরী ও অর্ণব সিংহ জানান, ১৯ মে প্রথম শুনানিতে বিচারপতি দত্ত সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্তকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, পুলিশি তদন্তের সবিস্তার রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে।
এ দিন দ্বিতীয় শুনানিতে মামলার নথি দাখিল করে শুভব্রতবাবু দাবি করেন, ‘‘তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, ওই যুবকের পা দু’টি ট্রেনেই কাটা পড়েছে।’’ তা শুনে বিচারপতি দত্ত সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, যুবকের দু’টি পা বাদ গেল, কিন্তু তা ট্রেনেই কাটা পড়েছে কি না, সেটি তদন্তকারী অফিসার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করলেন না কেন। বিচারপতি জানতে চান, ট্রেনেই যদি পা কাটা পড়ে, রেল কর্তৃপক্ষকে কি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোনও ট্রেনচালক নক ডাউন মেমো দিয়েছিলেন কি না?
গঙ্গার আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, পুলিশ দাবি করলেও রাহুলের সঠিক বয়ান তদন্তকারী নথিভুক্ত করেননি। এর পরে ফের মামলার নথি পড়ে বিচারপতি দত্ত প্রশ্ন তোলেন, এত জন অভিযুক্ত, কিন্তু গ্রেফতার হয়েছে মাত্র এক জন। বাকিরা কোথায়? সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ‘‘তাদের খোঁজ চলছে।’’ কিন্তু কোথায় কোথায় তল্লাশি চলছে, তা কেন মামলার নথিতে নেই, জানতে চান বিচারপতি। এর উত্তর শুভব্রতবাবু দিতে পারেননি। বিচারপতি দত্ত প্রশ্ন তোলেন, হাঁটুর তলা থেকে যুবকের পা কাটা পড়ল, আর জুতোয় মিলল ঘষটানোর চিহ্ন, কী করে হয়? এর পরেই তিনি মন্তব্য করেন, মামলার তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে কেন তুলে দেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা দিক রাজ্য। রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তদন্ত নিয়ে পুলিশের বক্তব্য হলফনামা আকারে দাখিল করতে।