—প্রতীকী চিত্র।
কখনও প্রতিবেশী রাজ্যের হাসপাতালে ঢুকে গ্যাংস্টারকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীদলের কলকাতায় পালিয়ে আসা। কখনও আবার একাধিক খুনেঅভিযুক্ত দুষ্কৃতীর তিহাড় থেকে প্যারোলে বেরিয়ে কলকাতার হোটেলে এসে আশ্রয় নেওয়া। শুধু প্রতিবেশী রাজ্য নয়, সুদূর রাজস্থান থেকেও খুনে অভিযুক্তদেরকলকাতায় এসে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে। গত কয়েক মাসে কলকাতায় পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া এমন একাধিক দুষ্কৃতীকে এ শহর থেকে গ্রেফতার করেছে ভিন্ রাজ্যের পুলিশ। দীর্ঘ সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেগত বৃহস্পতিবার রাতে ট্যাংরার বহুতল থেকে কুখ্যাত দুষ্কৃতীকেগ্রেফতারের ঘটনা। যা দেখে অনেকেরই মনে হচ্ছে, এ শহর যেন হয়ে উঠেছে ভিন্ রাজ্যের অপরাধীদের নিরাপদ ঠিকানা! পর পর এ ভাবে ভিন্ রাজ্যের অপরাধীদের শহর থেকে গ্রেফতার করার ঘটনায়কলকাতার নিরাপত্তা নিয়েই বড়সড়প্রশ্ন উঠেছে। দেশের নিরাপদতম শহরের তকমা পাওয়া কলকাতাথেকে একের পর এক দুষ্কৃতীর গ্রেফতারি দেখে সচেতন শহরবাসীর একাংশ কাঠগড়ায় তুলছেন পুলিশি নজরদারিকেই।
বৃহস্পতিবার রাতে ট্যাংরার বহুতল থেকে নওশাদ নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে বিহার পুলিশের এসটিএফ। বিহারে খুনের চেষ্টা, তোলাবাজি, হুমকি-সহ একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত নওশাদ দিন দশেক ধরে ট্যাংরার ওই বহুতলের ১৪তলায় আশ্রয় নিয়ে থাকছিল। সে রীতিমতো ঘর ভাড়ানিয়ে ১০ দিন ধরে সেখানে থাকলেও তা স্থানীয় থানার নজরে আসেনি বলেই খবর। এই ঘটনা শুধু নয়, গত ১৮ নভেম্বর ছ’টি খুনেরমামলায় অভিযুক্ত, উত্তরপ্রদেশের এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে ভিন্ রাজ্যের পুলিশ। সোহরাব নামে ধৃত ওই অভিযুক্ত পার্ক স্ট্রিট এলাকায় থাকছিল। এমনকি, নাম ভাঁড়িয়ে কলকাতায় অ্যাপ-ক্যাব চালক হিসেবে কাজও নিয়েছিল সে। তিহাড় সংশোধনাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে না ফেরা সেই আসামির খোঁজে দেশ জুড়েতল্লাশি শুরু করেছিল দিল্লি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। অবশেষে কলকাতায় তার খোঁজ মেলে। বিহারের হাসপাতালের ভিতরে গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রকে খুনের ঘটনায় ধৃত অভিযুক্তদেরসঙ্গেও কলকাতা-যোগ পাওয়া গিয়েছিল। তাদের পাঁচ জনকে জুলাই মাসে কলকাতা থেকেই গ্রেফতার করা হয়। জানা যায়, খুনে অভিযুক্ত নিশু, বাদশারা তাদের এক বান্ধবীর সাহায্যে আনন্দপুর থানা এলাকায় একটিঅতিথিশালায় আশ্রয় নিয়েছিল। দুষ্কৃতীদের এক জন তার নিজের নামেই আনন্দপুরের ওই অতিথিশালার তেতলায় ঘর ভাড়া করেছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। শেষে কলকাতা এবং বিহার পুলিশের দল রাতে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে গ্রেফতার করে অভিযুক্তদের। ভিন্ রাজ্যের অপরাধীদের কলকাতায় আশ্রয় নেওয়ার তালিকা যে লম্বা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সদ্য প্রকাশিত ২০২৩ সালের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ (এনসিআরবি)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, নিরাপদ শহরের তকমাপেয়েছে কলকাতা। পর পর চার বার দেশের মধ্যে এই তকমা নিজেরদখলে রাখতে পেরেছে এ শহর। কিন্তু এই শহর থেকেই পর পর ভিন্ রাজ্যের কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তারফাঁক গলে তবে কি ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে উঠছে তিলোত্তমা কলকাতা? কলকাতা পুলিশের কর্তারা যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ। লালবাজারেরএক কর্তার কথায়, ‘‘যে কোনও রাজ্য বা শহর থেকেই অন্য রাজ্যেরঅপরাধের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়। কলকাতা পুলিশের তরফেও একাধিক বার ভিন্ রাজ্যে গিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাই এশহর অপরাধীদের আখড়া, এই অভিযোগ ঠিক নয়। শহরবাসীর সুরক্ষায় বাহিনীর কড়া নজররয়েছে।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে