বাজেটে ফের ব্রাত্য রেল উড়ালপুল, দুর্ভোগ চলছেই

শিয়ালদহ থেকে দমদম স্টেশনে যাওয়া-আসার পথে সিগন্যাল পেতে প্রতিটি লোকাল ট্রেনকেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ২০ থেকে ২৫ মিনিট।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

শিয়ালদহ থেকে দমদম স্টেশনে যাওয়া-আসার পথে সিগন্যাল পেতে প্রতিটি লোকাল ট্রেনকেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ২০ থেকে ২৫ মিনিট। কারণ এই দমদম স্টেশন থেকেই অন্য লাইনগুলির উপর দিয়ে (সারফেস ক্রসিং) প্রায় আড়াআড়ি ভাবে বেরিয়ে গিয়েছে বনগাঁ লাইন। ফলে যে কোনও একটি শাখার ট্রেন সচল রাখতে অন্য শাখার ট্রেনগুলিকে আটকে রাখা ছাড়া আপাতত কোনও উপায় হাতে নেই শিয়ালদহের রেল কর্তাদের। আর নিত্য দিনের এই অহেতুক ‘লেট’-এর খপ্পরে পড়ে তিতিবিরক্ত যাত্রীরা।

Advertisement

যাত্রীদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেতে এই ডিভিশনের রেল কর্তারা দমদমে একটি রেল উড়ালপুলের প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। যা অনেক দিন আগেই বাজেটে অনুমোদিত হয়ে রয়েছে। কিন্তু এ বছরেও বাজেটে ওই প্রকল্পের জন্য এক টাকাও বরাদ্দ করেনি অর্থমন্ত্রক। আর এই বাজেটেও দমদমের রেল উড়ালপুল ব্রাত্য থাকায় আগামী আরও এক বছর শিয়ালদহ উত্তরের যাত্রীদের দুর্দশা কাটার কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না রেল কর্তাদের একাংশ। অথচ এই উড়ালপুল তৈরি হলে বনগাঁ লাইন দু’টিকে এর উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। যাতে সব লাইনের ট্রেন একসঙ্গে চলতে পারে।

ওই রেল কর্তাদের অভিযোগ, পূর্ব রেলের তরফে বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় সম্ভবত দেওয়া হয়নি। বলা হয়নি ওই উড়ালপুলের প্রয়োজনীয়তাও। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। অর্থমন্ত্রক বরাদ্দ তালিকায় এই প্রকল্পকে রাখেনি। পূর্ব রেলের কর্তারা অবশ্য এ বিষয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

শিয়ালদহ উত্তরের লাইনগুলির অন্যতম প্রধান সমস্যা হল, দমদমের ওই ক্রসিং। দমদমের উপর দিয়ে তিনটি শাখার লাইন গিয়েছে। মেন লাইন, ডানকুনি ও বনগাঁ শাখা। এর মধ্যে বনগাঁর দিকে যেতে হলে অন্য লাইনগুলি টপকে যেতে হয়। ফলে একটি লাইনের ট্রেন চালাতে গেলেই অন্য লাইনের ট্রেন আটকে রাখতে হয়। তাতেই আটকে থাকা ট্রেনগুলির যাওয়া-আসার পথে সময় নষ্ট হয় কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এই অবস্থার পরিবর্তন করতেই দমদমের রেল উড়ালপুলের প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে কোনও ভাবনা চিন্তাই করছে না রেল বোর্ড।

কী অবস্থায় চলছে শিয়ালদহ উত্তরের লোকাল ট্রেন? সকাল-সন্ধ্যায় বাদুড়ঝোলা ভিড়। যাত্রীসংখ্যা দিনে ১০-১২ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১০ বছর আগে সব ট্রেন বারো কামরার হবে ঘোষণা হলেও চলছে মাত্র কয়েক জোড়া ১২ কামরার ট্রেন। আর গতি! শিয়ালদহ থেকে ছাড়তেই কম করেও দেরি ২০ মিনিট। তার পরে প্রথম স্টপ ডিআরএম বিল্ডিং। এখানে অন্তত ৫ থেকে ১০ মিনিট। তার পরে দমদমে ঢোকার মুখে সিগন্যাল পেতে কম-বেশি ২০ মিনিট। বনগাঁর ট্রেন থাকলে দমদমে আরও প্রায় ১০ মিনিট। মাঝেমধ্যে টিটাগড় আসার আগে প্রায় ১০ মিনিট। ব্যারাকপুর ১২ নম্বর লেভেল ক্রসিংয়ের আগে আবার ১৫ মিনিট মতো। তার পরে ইছাপুর থেকে লাইন ক্লিয়ার নিয়ে ব্যারাকপুর থেকে ট্রেন ছাড়তে আরও ১৫ মিনিট।

নিত্য দিনের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান যাত্রীরা। বারবার রেল কর্তাদের কাছে আবেদন করে এখন ক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন তাঁরা। যাত্রীদের কথায়, রেলের পরিকাঠামোর উপরে নজর দেওয়া হবে বলে শুনেছিলেন। আশা করেছিলেন, ‘‘আচ্ছে দিন আসছে নিশ্চয়ই।’’ বাজেটে পরিকাঠামোর জন্য বরাদ্দও হয়েছে অনেক। কিন্তু তাতে শিয়ালদহের উন্নতি নিয়ে তেমন কোনও আভাস না পেয়ে এখন কার্যত অনেকটাই হতাশ যাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন