Durga Puja 2022

ভাসিয়ো না মা, প্রার্থনা সত্ত্বেও ভিজল পসরা, ষষ্ঠীর কলকাতায় রোল-ফুচকার দোকানিরা বিপাকে

দর্শনার্থী থেকে শুরু করে ছোটখাটো দোকানি— সকলেই বৃষ্টির কারণে বিড়ম্বনায় পড়েন। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া থাকায় ভিজে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পাননি কেউই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ২১:৫১
Share:

দিন প্রতি কয়েক হাজার টাকা দিয়ে পুজোর মাঠে জায়গা ভাড়া নিতে হয় সুভাষদের। —ফাইল ছবি।

লাল শালু মোড়া ফুচকার ঝুড়িটা কোনও মতে ঢেকে রেখেছেন এক চিলতে প্লাস্টিকে। নিজের মাথায় আর ছাতা জোটেনি। সুভাষ নস্কর তাই নিজে আশ্রয় নিয়েছেন মণ্ডপে। ঝমঝম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে ষষ্ঠীর সন্ধ্যা। ভিজে যাচ্ছে ম্যাডক্স স্কোয়ারের মণ্ডপ, মাঠ, চত্বর। জমতে শুরু করেছে কাদা। এক বার বাইরে বৃষ্টি মাপছেন সুভাষ। আর এক বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছেন মায়ের মুখে। অস্ফুটে বলে উঠছেন, ‘‘মা গো ভাসিও না।’’

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আচমকা বৃষ্টি নামে কলকাতা জুড়ে। প্রথমে মধ্য ও উত্তর কলকাতা, কিছু ক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি নামে শহরের দক্ষিণ অংশেও। দর্শনার্থী থেকে শুরু করে ছোটখাটো দোকানি— সকলেই বৃষ্টির কারণে বিড়ম্বনায় পড়েন। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া থাকায় ভিজে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পাননি কেউই। দর্শনার্থীরা তা-ও এ দিক ও দিক আশ্রয় নিলেও পসরা নিয়ে নড়তে পারেননি দোকানিরা। সুভাষ তাঁদেরই এক জন।

বৃষ্টির কারণে ভাঙা-ভিড়। টালিগঞ্জের একটি মণ্ডপে। নিজস্ব ছবি।

দিন প্রতি কয়েক হাজার টাকা দিয়ে পুজোর মাঠে জায়গা ভাড়া নিতে হয় সুভাষদের। স্টলের ভাড়া আরও বেশি। বৃষ্টির পূর্বাভাসে তাই মাথায় হাত এই সব ছোট ব্যবসায়ীদের। দোকানের ভাড়াটুকু উঠবে কি না, সেটাই এখন চিন্তায় রেখেছে তাঁদের। লাভ তো অনেক দূরের কথা। কারণ হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ষষ্ঠীর রাত থেকে বাড়বে বৃষ্টি। সপ্তমীতে দক্ষিণের সব জেলাতেই চলবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি।

Advertisement

এ রকম চললে পুজোর চার দিন বিকিকিনি হবে কী ভাবে? চোখে-মুখে হতাশা মণ্টু মাজির। বাগবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপের সামনের রাস্তায় বেলুন বিক্রি করেন তিনি। মন্টুর কথায়, ‘‘বৃষ্টিতে বাচ্চাদের নিয়ে পুজোয় বার হতে চান না বড়রা। ফলে বিক্রি হয় না। সারা বছর এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করি। বিকিকিনি না হলে কী করে চলবে?’’

আবহাওয়া দফতর শনিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, স্থানীয় মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টা দুয়েকের সেই বৃষ্টি থামলেও বিড়ম্বনা এক ফোঁটা কমেনি সুভাষদের। ফের পসরা গোছাতে কালঘাম ছুটেছে। নিজেরা কষ্ট সহ্য করে নিলেও সুভাষদের ব্যবসায় যে আজ জল ঢেলে দিয়েছে বৃষ্টি। হতাশ হয়ে গিয়েছেন সুভাষের মতো আরও হাজারো ব্যবসায়ী। যেমন ত্রিধারার মণ্ডপের সামনে ফিশ ফ্রাই, কাটলেটের স্টল দিয়েছেন অঞ্জন বিশ্বাস। হতাশা তাঁর গলাতেও। বলেন, ‘‘গত দু’বছর কোভিডের কারণে বিকিকিনি প্রায় বন্ধ ছিল। বাইরের খাবার খেতে চাননি আম বাঙালি। তাই পুজোর সময় স্টল কেনার চেষ্টা করিনি। এ বার ধারকর্য করে স্টল কিনেছি বড় পুজোর চত্বরে। এ ভাবে বৃষ্টি হলে কোথায় দাঁড়াব আমরা?’’ বলেই এক বার মণ্ডপের উদ্দেশে তাকান অঞ্জন। চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে ওঠে। বৃষ্টিতেই বটে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন